মহান মে দিবসেও দু‘মুঠো খাবারের আশায় কাজ করছেন যারা
তোবারক হোসেন খোকন, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ ভোর থেকে শুরু হয় ইটের ওপর হাতুরি চালানো শব্দ। একের পর এক ইট ভেঙ্গে যাচ্ছেন একদল নারী শ্রমিক। তৈরি হচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট খোয়া। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে টাকা পাওয়া যায়, কোন রকম চলে তাদের সংসার। এমন জীবন যুদ্ধে, মহান মে দিবসেও কাজ করে যাচ্ছেন নেত্রকোনার দুর্গাপুরের ফাতেমা, জহুরা, জাহানারা, আরতি দাস ও জমিলা খাতুনের মতো বেশ কিছু নারী শ্রমিক।
দুর্গাপুর পৌরশহরের পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১৫ বছর ধরে ইট ভাঙার কাজ করে আসছেন নারী শ্রমিকরা। এদের মধ্যে কারও স্বামী নেই, কেউবা অসুস্থ, কেউ বা সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে, কেউ দিনমজুর স্বামীর উপার্জনে সংসার চলেনা সংসারে একটু সহায়তা করার জন্য ইট ভাঙার কাজ করে যাচ্ছেন।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে হাতুড়ি দিয়ে ইট ভেঙে খোয়া করার কাজ। প্রতি বস্তুা খোয়া ভাঙ্গায় পারিশ্রমিক জোটে ১৫ টাকা। প্রায়দিনই হাতুড়ি কিংবা ইটের আঘাতে হাত ও পা ফেটেযায়। এরপরও জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে তারা লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তারা।
৬৫ বছর বয়সি রহিমা খাতুন বাস করেন পৌরশহরের বালিকান্দি গ্রামে। প্রায় ১৫বছর ধরে ইট ভাঙার কাজ করে আসছেন তিনি। স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। সংসারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি কিন্তু অভাগা কপাল একমাত্র ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে কোথায় যেনো চলে গেছে। ছেলে বউ ও নাতিদের নিয়ে বেঁচে আছি। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে ভিক্ষা না করে এই বয়সেও শ্রমিকের কাজ করছি।
নারী শ্রমিক ফাতেমা খাতুন আরও বলেন, তার বয়স ৬২ বছর। স্বামী অসুস্থ তাই তেমন আয়-রোজগার করতে পারেনা। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন দরিদ্র পরিবারে। দুই সন্তানের মধ্যে একজন দিনমজুরী করে যা মিলে তাতে তার সংসার চলে না। আরেক সন্তানকে সাথে নিয়েই ইট ভাঙার কাজ করছেন জহুরা। এখানে দুইজনের উপার্জনে চলে স্বামীর চিকিৎসা ও সংসার।
আরেক নারী শ্রমিক মামুনি রবিদাস বলেন, স্বামী চুলকাটার সেলুনে কাজ করে যা উপার্জন হয় তাতে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ মিলেনা তাই আমিও ইট ভাঙ্গার কাজে নেমেছি। এতো কষ্টের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও আমাদের জন্য কখনও মিলেনা সরকারি কোন সাহায্য।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর বলেন, আমরা জেনেছি শ্রমিক হিসেবে অসংখ্য নারীরা দুর্গাপুরে কাজ করে। তারা বছরের পর বছর ধরে এভাবেই পুরুষের সাথে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে আসছে। যে সকল নারী শ্রমিকরা পারিশ্রমিক পেতে বৈষম্যের শিকার হবে, তাদের কে সহায়তা করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়াও সরকারি সহযোগিতা পেলে তাদের মূল্যায়ন করা হবে।