৯টার সরকারি স্কুলে শিক্ষক আসেন ১টার পর
তোবারক হোসেন খোকন, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি:দীর্ঘ এক বছরের সময় ধরে আসেননি বিদ্যালয়ে। যদি আজকে এসছেন, তবুও বিদ্যালয়ে আসেন নিজের ইচ্ছা মতো। এর আগেও ওই শিক্ষক রুমা পালের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (০২ জুন) সকাল দশটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ে সাংবাদিকগণ অবস্থান নিলে তার সত্যতা পাওয়া যায়। ওই শিক্ষিকা আসলেন দুপুর ১টা ০৩মিনিটে। এ ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয় সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের ২০ জুন বিরিশিরি পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন সহকারী শিক্ষিকা রুমা পাল। এরপর পর থেকেই অনিয়মিত ছিলেন তিনি, বিদ্যালয়ে আসতেন নিজের ইচ্ছা মতো। গেল ২০২৪ সালের মে মাস থেকে চলতি ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত এক বছর ধরে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত আছেন। চলতি মাসের ১ জুন রবিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে স্কুলে আসেন তিনি। আজ সোমবারও দুপুর ১টার পর স্কুলে এসেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষিকা রুমা পাল এই বিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে বিরিশিরি প্রাথমিক বালক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও বিদ্যালয়ে আসতেন নিজের ইচ্ছা মতো। বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপাকে পড়েছিলেন তারপর কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর সেখান থেকে বদলি করে বর্তমান কর্মস্থলে দেয়া হয় তাকে। তবে এখানেও এসে তিনি একই ভাবে নিজের নিয়মে চলছেন। সরকারি নিয়ম-নীতিকে যেন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন তিনি।
বিরিশিরি পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকগণ জানান, সময়মতো স্কুলে না আসা এবং অনুপস্থিতের কারণে দৈনিক শ্রেণীপাঠদান রুটিন থেকে রুমা পাল কে বাদ দিয়েই রুটিন করে নিয়মিত পাঠদান দেয়া হচ্ছে। ওই শিক্ষিকার সময় ক্ষেপণ করে পাঠদানে ক্ষতিগ্রস্থ হয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষক সংকটে নিজেরাও পাঠদানে সমস্যাবোধ করেন।
এদিকে বিদ্যালয়ে দীর্ঘ এক বছর অনুপস্থিত ব্যাপারে জানতে চাইলে রুমা পাল জানান, তিনি অসুস্থতার জন্য মেডিকেল ছুটিতে ছিলেন। দুপুর ১ টার পর বিদ্যালয়ে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, অফিসের কাজে দেরি হয়েছে। গতকালও অফিসের কাজ ছিল। আগমী এক মাস চাকুরী করে নিজ ইচ্ছোয় চাকরি ছেড়ে দিবেন মর্মেও কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেছেন বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা খাদিজা আক্তার পাপড়ি বলেন, এক বছর ধরে রুমা পাল স্কুলে আসেননা, কেন আসেননা সেটাও জানিনা। আমার কাছে তাহার কোনো ছুটির আবেদনও নেই। এর আগেও প্রায় সময়ই তিনি দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটের সময় বিদ্যালয়ে এসেছেন। দীর্ঘ একবছর পর ০১ জুন (রবিবার) ১২টা ২০ মিনিটে তিনি বিদ্যালয়ে এসেছেন। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মহোদয় কে অবহিত করলে, তিনি বিদ্যালয়ে আসার ওই সময়ই হাজিরা খাতায় উল্লেখ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আমাকে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফজলুর রহমান বলেন, রুমা পাল আমাদের কাছ থেকে অসুস্থতার জন্য ছুটি নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি যোগদান করেছেন জানি কিন্তু নিজ ইচ্ছায় চাকুরী ছেড়ে দেওয়ারও একটি আবেদন করেছেন। সম্প্রতি যোগদানের পর বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে না গিয়ে দেরিতে যাওয়ার বিষয়টি জানতাম না। আমি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে দেখছি, যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।