দুর্গাপুরের পাহাড়ী আদিবাসীদের, বিশুদ্ধ পানির কষ্ট চরমে

Share the post

তোবারক হোসেন খোকন,দুর্গাপুর (নেত্রকানা) প্রতিনিধি : অতিরিক্ত তাপদাহে বিপর্যস্ত পাহাড়ি অঞ্চলের জনজীবন। পাহাড় ও টিলাবেস্টিত নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর সদর ও কুল্লাগড়া ইউনিয়ন। সেখানে গাড়ো, হাজং ও বাঙালী মিলিয়ে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। গত তিনদিনের গরমে বেড়েছে তীব্র তাপদাহ। সেইসাথে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এতে ডায়রিয়া সহ নানা রোগে আক্রান্তও হচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ।

পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষের পানিসংগ্রহে যেতে হয় মাইলখানেক দূরে। সেখানে পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়ার ময়লাযুক্ত ঘোলাপানি কিংবা পাহাড়ের নিচে চাক্কি দিয়ে তৈরি অগভীর কূপের পানিই তাদের একমাত্র ভরসা। এমন চিত্রের দেখা মিলেছে সীমান্তবর্তী ২০-২৫টি পাহাড়ি গ্রামগুলোতে।

এ নিয়ে রোববার (১১ মে) ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সীমান্তবর্তী গ্রাম গুলোতে চলছে ধান কাটার উৎসব। ধানক্ষেতে নামতেই ভিজে একাকার হচ্ছে তাদের শরীর। কিছুক্ষন পরপর গাছের নিচে এসে খেতে হচ্ছে পানি, কিন্তু সেইপানি স্বাস্থ্যসম্মত কিনা তা জানে না।

দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ফান্দা, বারোমারি, গোপালপুর, ভরতপুর, ভবানীপুরসহ ২০-২৫টি পাহাড়ি গ্রামে শুকনো মৌসুমে সাধারণ নলকূপ দিয়ে পানি আসেনা। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পানির লেয়ারের নীচেই পড়ে যায় পাথর। যেকারনে নলকূপ বা বৈদ্যুতিক পাম্প স্থাপন খুবই ব্যয় বহুল। স্থানীয়ভাবে রিং টিউবওয়েল বসানো হলেও আয়রনের কারণে তা খাওয়ার অযোগ্য হলেও বাধ্য হয়ে পান করতে হয়। এতে বিভিন্ন সময়ে রোগেআক্রান্ত হতে হয় গ্রামের সাধারণ মানুষদের।

ওই গ্রামের আদিবাসী মিহির হাজং বলেন, আজ সকালেই বের হয়েছি ধান কাটার জন্য। কিন্তু অতিরিক্ত গরমের কারনে বেশিক্ষণ ধানক্ষেতে থাকতে পারছি না। গত তিনদিনধরে খুব বেশি গরম পড়েছে। সারাদিন পানি খেয়ে থাকার কারনে শরীর খুবই ক্লান্ত হয়ে যায়। যে পানি খাচ্ছি সেটা বিশুদ্ধ কিনা তা জানি না। অতিরিক্ত গরমে আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে

দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের বিনীতা সাংমা বলেন, এই গরমের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন পাহাড়ের নিচের গর্ত থেকে গিয়ে নিয়ে আসি। বয়সের ভারে শরীরেও সয়না এখন। দিনে কয়েকবার পাহাড় বেয়ে উঠানামা করতে হয়।

জাতীয় হাজং সংগঠনের সভাপতি পল্টন হাজং বলেন, বিশুদ্ধ পানির ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোন কাজ হয়নি। ফলে অস্বাস্থ্যকর পানি ব্যবহার করতে হয় তাদের। এতে করে সব সময়ই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে তারা। এ বিষয়ে সরকারের উর্দ্ধতন মহলের সহায়তা কামনা করছেন তিনি।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. কাজী আমান উল্লাহ বলেন, ইতিমধ্যে ওই গ্রামগুলোর বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। পাহাড়ি এলাকায় পানির সংকট নিরসনে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ইউনাইটেড চ্যারিটি ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বিভাগীয় নতুন কমিটি ঘোষণা।

Share the post

Share the postমোঃ রুবেল: ইউনাইটেড চ্যারিটি ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ।স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে কাজ করছে সামাজিক সংগঠন’ ইউনাইটেড চ্যারিটি ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলায় ও ৮ বিভাগের চলোমান কর্যক্রম। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি নিয়ে নতুন পথ চলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল। একের কাঁদে অন্য হাত,মানবতার বাঁধন টিকে থাক,এই স্লোগানকে বুকে লালন করে একদণ তরুণ স্বেচ্ছাসেবক মানবতার […]

চন্দনাইশে মানবতার ফেরিওয়ালার পক্ষ থেকে এক নারীকে সেলাই মেশিন উপহার

Share the post

Share the postমোঃ রুবেল খান, চট্টগ্রাম:চন্দনাইশের মধ্যম হাশিমপুর ৪নং ওয়ার্ডের মোজাহের পাড়ার বাসিন্দা মুন্নি নামে এক নারীকে সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে মানবতার ফেরিওয়ালা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নারী উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।