ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ১৪ টি গ্রাম

Share the post
মাহমুদুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম বিভাগঃআবারো ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ১৪ টি গ্রাম। গত ২-৩ দিনের ভারী বর্ষণের ফলে নদীর পানি বৃদ্ধি ও ঢেউয়ের তোড় বাড়ার কারনে ভাঙ্গনের হুমকিতে আছে ইউনিয়ন শোলাবাড়ি, শাখাইতি, দেওবাড়িয়া, নতুন হাটি, নরসিংহপুর ও নাইলাসহ প্রায় ১৪ টি গ্রাম। লাইয়ার হাটি ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন ভয়ে বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী স্থানে এই ভাঙ্গন চলছে প্রায় ১৩ বছর ধরে। বর্ষার সময়েই ভাঙ্গন প্রকট আকার ধারণ করে। ১৩ বছরে ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চাতালকল, বাজার ও গ্রাম।
ভাঙ্গন শুরু হলেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আশ্বাস দেন বেরিবাঁধ নির্মাণের। কিন্তু  ১৩ বছরেও বেরিবাঁধ নির্মিত হয়নি। ভাঙ্গন শুরু হলে ভাঙ্গনস্থলে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়।
ভুক্তভোগি ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১২ সাল থেকে পানিশ্বরে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। বর্ষা এলেই, ঢেউয়ের তোড় ও ভারীবর্ষণ হলেই সেখানে ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়ে। ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে পানিশ্বর মৌজা নামক বড় গ্রামটি ও পালপাড়া। নদী গর্ভে চলে গেছে মাহমুদ, পলাশ, খাজা, শ্রীগুরু, বজলু মিয়া, দারু মিয়া, নুরু মিয়া ও উসমান চৌধুরীর চাতাল মিলসহ প্রায় ৪৫ টি চাতাল মিল। সমিরবাড়ির মসজিদসহ অর্ধেকেরও  বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়।
পানিশ্বর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ছাদু মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ মোস্তফা মিয়া, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ছাদেক মিয়াসহ গ্রামবাসী জানান, ভাঙ্গন শুরু হয়েছে ১৩ বছর ধরে। ভাঙ্গন শুরু হলেই সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা, রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন দৌঁড়ে এসে পরিদর্শন করে যান। কিছু জিও ব্যাগ বরাদ্ধ দেন। নিজেরা উপস্থিত থেকে ব্যাগ ফেলেন। ছবি উঠান। এই পর্যন্তই শেষ। যাওয়ার সময় ঘোষনা দেন আগামীতে ভাঙ্গন রোধে ভেড়িবাঁধ দেয়া হবে। কিন্তু ১৩ টি বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের ভেড়িবাঁধের স্বপ্ন আর আলোর মুখ দেখছে না। গত কিছু দিন আগে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছিলেন। গত ৬ ই মে ৫১ লাখ টাকার জিও ব্যাগ বরাদ্ধ হয়েছিল। ১৩ ই মে জিও ব্যাগের কাজটির টেন্ডার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টেন্ডারের তারিখের একদিন আগে ১২ ই মে টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোশারফ হোসাইন নদী ভাঙ্গন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনের কথা স্বীকার করে বলেন, ভাঙ্গনের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে আজবপুরসহ সমগ্র এলাকাই ঘুরে দেখেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ও উপজেলা প্রশাসন থেকে দেড় লাখ বরাদ্ধ দিয়ে আজবপুরের বড় ভাঙ্গন রোধ করেছি। পানিশ্বরসহ সেখানকার ১২-১৪ টি গ্রামকে রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বুঝিয়েছি। জিও ব্যাগের জন্য একটি ভালো প্রকল্পও বরাদ্ধ হয়েছিল। আর্থিক সংকটের কারণে সেই বরাদ্ধটি আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পরবর্তীতে ওই বরাদ্ধ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নবীনগরে অস্ত্রসহ একজন আটক

Share the post

Share the postমাহমুদুল হাসান স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম বিভাগঃব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বিশেষ অভিযানে দেশীয় তৈরি একটি দুইনলা বন্দুকসহ এক যুবককে আটক করেছে নবীনগর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার ২ অক্টোবর ভোরে উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের সাহেবনগর এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। পুলিশ জানায়, ভোর ৪ টা থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত নবীনগর থানার ওসি শাহীনূর ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। […]

নবীনগরে ভিমরুলের কামড়ে শিশুর মৃত্যু

Share the post

Share the postমাহমুদুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম বিভাগঃব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বিষাক্ত ভিমরুলের কামড়ে ৪ বছরের শিশু তামিমের মৃত্যু হয়েছে। শিশু তামিম উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের মেহেরুল ইসলামের পুত্র। পরিবারের সদস্যরা জানান, বুধবার সকালে শিশু তামিমকে ভিমরুলে কামড়ালে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে দুপুর ২ টার দিকে তাকে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য […]