নেত্রকোনায় বিলে ঝিলে সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে ডাকছে জাতীয় ফুল শাপলা, মুগ্ধকর প্রকৃতির মনোরম পরিবেশ

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে বাংলার প্রকৃতিও সাজে নতুন নতুন রূপে। এর মধ্যে বর্ষাকালে প্রকৃতি যেন নবযৌবন ফিরে পায়। সবুজ পাতায় ছেয়ে যায় বৃক্ষরাজি। বিশেষ করে বর্ষাকালে জলজ উদ্ভিদ প্রাণ ফিরে পায়। শাপলা,শালুক, কচুরিপানা আর পদ্মফুলে সজ্জিত হয় খাল-বিল আর নদী। নেত্রকোনা জেলা সদর সহ দশটি উপজেলায় অবস্থিত সকল বিলেই এমনই লাল ও সাদা শাপলা ফুলে সজ্জিত হয়ে নিজের সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতি প্রেমীদের মধ্যে। জেলার দশটি উপজেলার ছোট বড় সকল বিলেই শাপলা ফুল ফুটেছে রংবেরঙের দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে এই বিল গুলোর চারিদিকে চোখে পড়ে শুধু লাল আর সাদা শাপলা আর শাপলা। বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে লাল ও সাদা রঙের শাপলা ফুল দেখলে মন ও চোখ জুড়িয়ে যায়। এমন অপরূপ দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি  দিচ্ছে। শরতের ফুল হলেও নেত্রকোনার সকল বিলেই বর্ষাতেই তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক নিয়ে হাজির হয় লাল ও সাদা শাপলা। প্রকৃতিতে নিজের রূপ বৈচিত্র অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে ফুটে থাকা এ জলজ ফুল শাপলার উপস্থিতিতে যেন প্রাণ ফিরেছে জেলার সকল বিলে। শিশুদের উচ্ছ্বল মাখা শৈশবে। ভাসমান একেকটি শাপলার রূপশোভা অভিভূত করে যে কোনো বয়সের মানুষ কে। ছবির মতো সাজানো, হৃদয়কাড়া দৃশ্য আটকে রাখতে পারে না দুরন্ত শৈশবকে। শাপলা ফুলের সৌরভ বিমোহিত করে মনকে।
জেলার পূর্বধলা উপজেলার ধলা গ্রামের শাকিল আহম্মেদ তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখছি, রাজধলা বিলে বর্ষাকালে লাল ও সাদা শাপলা ফুল ফোটে। আমাদের এলাকার আসে পাশের শিশুরা শাপলা ফুল তুলে নিয়ে যায় এলাকার বিভিন্ন হাট বাজারে। মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর গ্রামের বৃদ্ধ কছিম উদ্দিন বলেন, বর্ষা এলেই আমাদের বিলে শাপলা ফুল ফোটে। আমরা ছোটবেলায় শুকনো মৌসুমে  অনেক শাপলা গাছের (শালুক) বীজ কুড়িয়ে খেয়েছি। এখন আর বেশি শালুক দেখা যায় না, তবুও বর্ষায় শাপলা ফুলের গাছ জন্মে। ঐ এলাকার স্থানীয় অনেকেই বলেছেন, এক সময় মোহনগঞ্জের হাটে বিভিন্ন বিলের পদ্মপাতায় শাপলা, শালুক, মাছ, পাট,খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করা হতো।এছাড়া ইরি মৌসুমে এখানে ধানের আবাদ হয়। শীত মৌসুমে ধান, শাক, সবজিরও আবাদ হয়। ওই সময় শাপলা গাছের কোনো চিহ্ন দেখা যায় না। জেলার অনেকেই বলে বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে জেলার সকল বিল। তখনই দেখা যায়, হাজার হাজার লাল ও সাদা শাপলা ফুল ফুটে আছে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত এ শাপলা ফুল ফুটে থাকে।মোহনগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় স্কুলশিক্ষক বিল রক্ষণা-বেক্ষণের দাবি জানিয়ে বলেন, বছরের অন্তত চার মাস বিলে লাল ও সাদা শাপলা ফুল ফুটে এবং সৌন্দর্য ছড়ায়।স এ সময়টায় শাপলা ফুল গুলো যেন কেউ না তোলে, তাহলে শাপলা ফুল গুলো আরো রংবেরঙের রং ছড়াবে। প্রকৃতির এমন দৃশ্য গ্রামীণ জীবনে ডেকে আনে একটু প্রশান্তি আর কারও কারও জীবনে শাপলা ফুল জড়িয়ে আছে কতই না স্মৃতি। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) জেলার কয়েকটি বিল ঘুরে দেখা যায়, জেলায় অবস্থিত সকল বিস্তৃর্ণ বিলজুড়ে সাদা ও লাল রঙের শাপলা ফুল ফুটে আছে।রাজধলা বিল নামে পরিচিত এ বিলের পাশে রয়েছে আরও কয়েকটি বিল। এ বিলের আবদ্ধ পানিতে শাপলা-শালুক আর পদ্মফুলের ছড়াছড়ি। পদ্মা ফুল না ফুটলেও শাপলা ফুটেছে বিলটিতে। সারি সারি শাপলা ফুলের সৌন্দর্য  বিনোদন প্রেমীদের মুগ্ধ করছে। তবে প্রতিদিন শত শত ফুল ছিঁড়ে নিয়ে বিলটির সৌন্দর্য নষ্ট করছেন অনেকেই।
ভার্চুয়াল সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জলজ উদ্ভিদ লাল শাপলা ঔষধি গুণসহ বহু বর্ষজীবী। স্কন্দের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ গাছটিও বাড়তে থাকে। একটি গাছে একটি ফুল ফোটে। এটি সাদা,ও লাল রঙের হয়। ফুটন্ত ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ থাকে। রাত থেকে সকালের মধ্যে ফুল ফোটে। আর রোদের তীব্রতায় সংকুচিত হয়। রৌদ কমে গেলে আবার প্রস্ফুটিত হয় এই ফুল। বর্ষা মৌসুমে খাল-বিলের পানিতে শাপলা ফুল ফুটতে দেখা যায়। শরৎ ও হেমন্তে লাল শাপলা ফুটে থাকে। তাই সকল ফুল প্রেমীদের দাবি সরকারিভাবে শাপলা ফুল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হোক, কারণ শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল যেভাবে শাপলা ফুল বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এভাবে বিলুপ্ত হলে আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে শাপলা ফুল বইয়ে ছবি এঁকে দেখাতে হবে, না হয় জাতীয় জাদুঘরের গিয়ে তাদেরকে শাপলাফুল দেখাতে হবে ছবির মাধ্যমে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের বাসভবনে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মুছে ফেলা হয়েছে

Share the post

Share the post হৃদয় আহমেদ ভালুকা, ময়মনসিংহ: রক্তাক্ত জুলাই আগষ্ট চেতনার গ্রাফিতি। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর বিপ্লবী চেতনা ধরে রাখতে শিক্ষার্থীরা ময়মনসিংহ নগরীর বাসা বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি অফিস ও আদালতসহ জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের দেয়াল জুড়ে জুলাই-আগষ্ট চেতনার গ্রাফিতি অঙ্কন করেছি। বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের আঁকা সেই রক্তাক্ত জুলাই আগষ্ট […]

ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় এর উদ্যোগে গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

Share the post

Share the postনিউজ রিপোর্ট:৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার – ময়মনসিংহ মহানগরের অধীনস্থ ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় ছাত্রদল গাজায় চলমান ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার প্রতিবাদে একটি অবস্থান কর্মসূচি এবং বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানায়, গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে।   মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রদল সদস্যরা সকাল ১১ টার দিকে মিছিলটি শুরু […]