কুষ্টিয়ায় সাইজির আখড়াবাড়ীতে লালন ভক্ত-অনুসারী ও দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছে
সুজন কুমার কর্মকার, কুষ্টিয়া : ১৭ অক্টোবর (১ কার্তিক) আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪ তম তিরোধান দিবস। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া লালন আখড়াবাড়িতে তিনদিন ব্যাপী লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। লালন মেলার আগে থেকেই ভক্ত-অনুসারীরা দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন। তিরোধান দিবস উপলক্ষে কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে অস্থায়ী থাকার জায়গা ও বেশ কয়েকটি দোকান বসেছে। লালন শাহের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড়ঘেঁষে বসেছে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীদের খণ্ডখণ্ড দল। সেখানে ভিড় জমাচ্ছে দর্শনার্থীরা। মাজার প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে বর্ণিল পরিবেশ সৃষ্টি করছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীদের খণ্ডখণ্ডভাবে দলবদ্ধ হয়ে লালন ফকিরের গান গাইছেন। দিনরাত গান ছাড়াও তারা লালন ফকিরের বাণী নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনেকে আবার লালনের মত ও পথের দীক্ষা নিচ্ছেন। আর এ মেলা দেখতে আসছেন হাজারো মানুষ।সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির আয়াজনে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে তিন দিনব্যাপী লালন মেলা শুরু হবে। লালন মেলা অনুষ্ঠানে প্রতিদিনই আলোচনা সভা শেষে মঞ্চে শুরু হবে লালন সঙ্গীত। যা গাইবেন লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পী ও ভক্তরা।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের মৃত্যুর পর থেকে তার স্মরণে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এই স্মরণোৎসব চালিয়ে আসছেন। প্রতিবছর ১ কার্তিক আড়ম্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস পালন করা হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লালন মেলা উপলক্ষে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে দূরদূরান্ত থেকে হাজারো ললন ভক্ত-অনুসারীরা এসেছেন।লালনের বাণী ও আদর্শ নিয়ে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন। লালনের গানে গানে মুখরিত হয়ে উঠেছে। ভক্ত অনুসারীরা লালন ফকিরের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড়ঘেঁষে অস্থায়ীভাবে তৈরি করেছেন আস্তানা। লালন মেলায় কালি নদীর পাড়ে মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। আশপাশের এলাকায়ও হরেক রকম পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।লালন ভক্ত ও অনুসারীরা জানান, প্রতিবারই লালন মেলায় লাখ লাখ মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়। এবার মেলা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাজারো ভক্তরা এসেছেন। যতই সময় পার হচ্ছে ততই ভিড় বাড়ছে। লালন ফকিরের গানে গানে এখন মুখরিত এই এলাকা।
মরমি সাধক ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার শহরতলি কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে ১৮৯০ সালের ১ কার্তিক দেহ ত্যাগ করেন। এখানে পরবর্তীতে লালন মেলার আয়োজন শুরু হয়। সেই থেকে প্রতি বছরই নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত এ উৎসব পালন করা হয়। সাঁইজির স্মরণে দিবসটি ঘিরে তিন দিনের অনুষ্ঠান হয় আখড়াবাড়িতে। সাধু ভক্তদের এই মিলন মেলায় লালনের রেখে যাওয়া মানবমুক্তির আধ্যাত্মিক বাণী সম্বলিত গান গাওয়া হয়। লালন শাহের গান শুনতে ও এখানে ঘুরতে জড়ো হচ্ছেন অসংখ্য দর্শনার্থীরা। কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছাঃ শারমিন আখতার বলেন, বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপী লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিনই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে আলোচনা সভা শুরু হবে, আলোচনা শেষে শুরু হবে লালন সঙ্গীত। মেলার সার্বিক প্রস্তুতি চলছে।