স্ত্রীর স্বপ্ন পুরনে কৃষক দুলাল চন্দ্র রায় তার জমি বিক্রি করে হাতি ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন
মোঃ মাইনুল হক, রংপুর : স্ত্রীর দেখা হাতি পালনের স্বপ্ন পূরণ কারী প্রেমিক স্বামী দুলাল চন্দ্র রায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রথিধর দেউতি গ্রামের মৃত বীরেন্দ্র নাথের ছেলে। কৃষক দুলালের গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রানি সংরক্ষণ ও যত্নবান হতে দৈব্য নির্দেশ (স্বপ্নে আদিষ্ট) পান দুলাল চন্দ্রের স্ত্রী তুলসী রানী দাসী। সেই দৈব্য নির্দেশ পালনে কয়েক বছর আগে স্বামীর কাছে প্রথমে একটি ঘোড়া, রাজহাঁস ও ছাগল ক্রয় করে নিয়ে তাদের পরিচর্যা করেন তুলসী রানী দাসী। গেল এক বছর আগে আবারো দৈব্য নির্দেশনা পান হাতি ক্রয় করে তার যত্ন নেয়ার। এ নির্দেশনা পেয়ে পুনরায় স্বামী দুলালের কাছে হাতি ক্রয় করতে বায়না ধরেন তুলসী রানী দাসী। স্ত্রীর সেই স্বপ্ন পুরন করতে ১১ বিঘা জমির ২ বিঘা বিক্রি করে হাতি ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহন করেন দুলাল চন্দ্র। পরিকল্পনা করে থেমে থাকেন নি। খোঁজ খবর নিয়ে সিলেটের মৌলভীবাজার গিয়ে সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় হাতি ক্রয় করেন তিনি। ২০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিয়ে হাতি নিয়ে গত সপ্তাহে বাড়ি ফিরেন কৃষক দুলাল চন্দ্র রায়। হাতিকে দেখভাল করতে ইব্রাহীম মিয়া নামে এক মাহুতকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে মৌলভীবাজার থেকে নিয়ে আসেন তিনি। গ্রামের প্রভাবশালী কৃষক দুলাল চন্দ্র হাতি ক্রয় করেছেন শুনে শুধু ওই গ্রামবাসী নয়, দুর দুরান্ত থেকে মানুষজন হাতিটি দেখতে ভির করছেন দুলাল তুলসী দম্পতির বাড়িতে। অনেকেই হাতির সামনে সেল্ফিও তুলছেন মজা করে। আপাত গ্রামের রাস্তার ধারে থাকা কলাগাছ কেটে হাতিটিকে খাওয়ানো হচ্ছে। গ্রামের কলাগাছ শেষ হলে বাহির থেকে সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান মালিক দুলাল চন্দ্র। ওই গ্রামের অতুল চন্দ্র বলেন, অনেক দিন ধরে শুনছি, দুলাল চন্দ্র হাতি কিনবেন। অবশেষে জমি বিক্রি করে তিনি স্ত্রীর কথামত হাতি কিনে এনেছেন। সেই হাতি দেখতে প্রতিদিন দুর দুরান্ত থেকে শত শত মানুষ বাড়িতে ভির করছে। শুনেছি, স্বপ্নে দেখা দেবতা বিশ্বকর্ম্মার নির্দেশে তুলসী রানী ঘোড়া, রাজহাঁস ক্রয়ের পরে এবার হাতি ক্রয় করেছেন। তারা প্রভাবশালী মানুষ। হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি বা ব্যবসা করার জন্য ক্রয় করেন নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পাশ্ববর্তি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট এলাকার শতবর্ষি বাসন্তী রানী বলেন, স্ত্রীর স্বপ্ন পুরনে দুলাল চন্দ্র হাতি কিনেছেন শুনে তা দেখতে এসেছি। জীবনে অনেক বার হাতি দেখেছি। তবে স্ত্রীর স্বপ্ন পুরনে এই যুগে কেউ হাতি কিনেছেন। সেটা দেখতে এসেছি। হাতির মাহুত ইব্রাহীম জানান, খাওয়া থাকা মালিকের এবং প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা মজুরীতে মৌলভীবাজার থেকে এসেছেন তিনি। আগামীতে মাহুত বানাতে স্থানীয় দুইজনকে প্রশিক্ষন দিচ্ছেন। তারা প্রশিক্ষিত হলে তাদের উপর দায়িত্ব দিয়ে চলে যাবেন বলেও জানান তিনি। তুলসী রানী দাসী বলেন, দেবতা মহাদেব ও বিশ্বকর্ম্মা স্বপ্নে নির্দেশ করেছেন হাতি ক্রয় করে তার যত্ন নিতে। তাই স্বামীর কাছে হাতি ক্রয়ের বায়না ধরায় স্বামী সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় হাতি ক্রয় করেছেন। দেবতা যতদিন রাখতে বলবেন ততদিন হাতি বাড়িতে থাকবে। পরবর্তি নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত হাতিকে রেখে যত্ন নেয়া হবে। আরো কোন নির্দেশনা এলে সেটাও বাস্তবায়ন করবেন বলেও জানান তিনি। হাতির মালিক দুলাল চন্দ্র রায় বলেন, স্ত্রী স্বপ্নে দেখেছেন দেবতা হাতি কিনে যত্ন নিতে বলেছেন। তাই স্ত্রীর সেই স্বপ্ন পুরনে জমি বিক্রি করে সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় হাতিটি ক্রয় করেছি। হাতিটির দেখভাল করতে মৌলভীবাজার থেকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনে মাহুতকে নিয়ে এসেছি। যাতে হাতির পরিচর্যায় কোন সমস্যা না হয়। আপাতত হাতির পিছনে মাহুতের মজুরী এবং কলাগাছের জন্য দৈনিক এক/দেড় শত টাকা খরচ হচ্ছে। ইতিপুর্বে ঘোড়া ও রাজহাঁস কিনতে বলায় সেটাও ক্রয় করে দিয়েছি। স্ত্রীকে খুশি করতেই মুলত হাতি ক্রয় করেছেন বলেও দাবি করান