নেত্রকোনায় সাব-রেজিস্ট্রি ও ভুমি অফিসে দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

Share the post
সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা : জেলার সকল উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করা, দলিল প্রতি মোটা অংকের ঘুষ নেয়াসহ নানা দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খাজনা খারিজসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও দলিল প্রতি মোটা অংকের উৎকোচ না দিলে সাব-রেজিস্ট্রার দলিল স্বাক্ষর করছেন না বলে খোদ দলিল লেখক ও দাতা গ্রহীতারা অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া কর্মস্থলে যোগদানের পর কোনো সাব-রেজিস্ট্রার সপ্তাহে তিন দিনের বেশি অফিস করেন না বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে দ্বিগুণ উৎকোচের বিনিময়ে জাল কাগজপত্র দিয়েই দলিল পাড় করারও অভিযোগ উঠেছে দুই একজন সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় যে সকল গ্রহীতা উৎকোচ দিতে অনিচ্ছুক তারা দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর যারা বাধ্য হয়ে উৎকোচ দিচ্ছেন তারা সীমাহীন ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।বুধবার(৪ সেপ্টেম্বর ) বারহাট্টা সরেজমিনে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, দাতা গ্রহীতাদের মধ্যে যারা সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক দলিল প্রতি নির্ধারিত উৎকোচ জমা দিচ্ছেন তাদের দলিলে বিশেষ চিহ্ন দিয়ে এজলাসে দাখিল করা হচ্ছে। আর যারা উৎকোচ দিচ্ছেন না তাদের কাগজপত্রে বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়ে ফেরত দেয়া হচ্ছে।
মোহনগঞ্জ উপজেলায় দীন মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, উৎকোচ না দেয়ায় কাগজের ত্রুটি দেখিয়ে গত সপ্তাহে তাদের দলিলটি ফেরত দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ হয়রানির পর অফিসে ১ হাজার ৩০০ টাকা ঘুষ দেওয়ার পর দলিল জমা নেয়া হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান রেজিস্ট্রার যোগদানের পর থেকে সাব কবলা দলিল প্রতি ১ হাজার ৩০০ টাকা, হেবার ঘোষণা দলিল প্রতি ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা প্রকাশ্যে ঘুষ নিচ্ছেন। আর কাগজের ত্রুটি থাকলে আরও অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। এদিকে নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া, কেন্দুয়া, পূর্বধলা, খালিয়াজুরী, মদন, কলমাকান্দা ও দূর্গাপুর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে যোগাযোগ করলে এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন দলিল লেখক বলেন, ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দলিলের ক্ষেত্রে পে-অর্ডার বাদে ২% টাকা হাতে নেয়ার নিয়ম আছে। এ ছাড়া আর কোনো টাকা নগদ নেয়ার নিয়ম নাই। কিন্তু আমরা অফিসারদের কাছে জিম্মি। এদিকে জেলার সকল ইউনিয়ন ভূমি অফিসেও ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। সেবা নিতে গেলে সেবাপ্রার্থীদের প্রতিটি পদে পদে দিতে হচ্ছে ঘুষ। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সেবাপ্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে সেবা থেকে। বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারদের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে ঘুষ বাণিজ্য। ঘুষ না পেলে ফাইল ছাড়েন না তারা। শুধু তাই নয়, তারা একজনের জমি আরেকজনকে খারিজ দিয়ে চেক কাটেন এবং সংশোধনের নামে মোটা অংকের টাকা দাবি করে থাকেন। জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। ভূমি অফিসে গিয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েন। অনেকেই দালালদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। অনেকে আবার টাকা দিভূয়ে প্রতারিত হয়েছেন। দালাল টাকা নিয়েছে ঠিকই, তবে কাজ করে দেয়নি। ভোক্তভোগীদের সাথে কথা বলে নানা হয়রানির কথা জানা যায়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, নাম প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, নামজারি, ডিসিআর সংগ্রহ, মিস কেস ও খাজনা দাখিল থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঘুষের কারবার চলছে সমানতালে। জমির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঘুষ লেনদেন, প্রতিটি ভূমি অফিসে দালালদের সিন্ডিকেট অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের আরো অভিযোগ, বৈধ কাজে গিয়েও প্রকৃত মালিকদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। অসাধু তহশিলদারকে ‘ম্যানেজ’ করে খারিজ পার করতে হয়। জমির মালিকরা টাকা দিয়েও জমি খারিজ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দালাল উৎপাতও বেশি। সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। তবে টাকা দিলে তদন্ত প্রতিবেদন, সার্ভে রিপোর্ট আর নামজারি খতিয়ানের অবৈধ কাগজ বের করা কোনো ব্যাপারই না। অনুসন্ধানে জানা যায়, খাস জমি, বনের জমি, একজনের জমি অন্যের নামে নামজারি করে দেয়াসহ নানা অনিয়ম হচ্ছে জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। এইসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সঠিক নয়। তারা আরও বলেন, তাদের কার্যালয়ে ঘুষের কোনো লেনদেন হয় না। এ ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, যদি কোনো তহশিদার কোনো প্রকার ঘুষ বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এই প্রতিনিধিকে আরও বলেন, এই বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আমি জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছি। এবং সর্বপুরী সকল ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নেত্রকোনায় আওয়ামী নেতা কর্মীরা জামিন না পাওয়ায় আদালত চত্বরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : বিশেষ সূত্রে জানা যায় গত (২৪ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার নেত্রকোনায় আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় আদালতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছেন আসামিরা। এসময় হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার সময় আসামিদের পাশে থাকা এক যুবককে মারধর করার অভিযোগও ওঠেছে। গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে এমনই ঘটনা ঘটেছে […]

নেত্রকোনায় বোরো আবাদে ব্যস্ত হাওরাঞ্চলের কৃষক, দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনার ১০ উপজেলার মধ্যে তিনটি হাওরাঞ্চল। এই তিন উপজেলা হলো মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও মদন। এ তিনটিতে বর্তমানে পুরোদমে চলছে বছরের প্রধান ফসল বোরো ধানের আবাদ। প্রতিদিনই তীব্র শীত উপেক্ষা করে বোরো আবাদে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে বোরো আবাদ করতে […]