গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে সাঁওতালদের গণ অনশন
মোঃ নুর আলম আজাদ,গাইবান্ধা প্রতিনিধি ৷৷ ‘সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে ইপিজেড করা যাবে না। সাঁওতাল-বাঙালি এক হও। সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মে ইপিজেড নির্মাণ বন্ধ করো, করতে হবে।’ এসব
দাবিতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতালরা গতকাল শনিবার বিক্ষোভ ও গণঅনশন
কর্মসূচি পালন করে। সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এ সমাবেশ ও
গণঅনশন চলে। এর আগে তিন শতাধিক সাঁওতাল গোবিন্দগঞ্জের মাদারপুর ও
জয়পুর গ্রাম থেকে মিছিল নিয়ে বাগদা ফার্ম কাটামোড় এলাকায় সমবেত
হয়। মহিমাগঞ্জস্থ সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় তিন ফসলি জমিতে
ইপিজেড নির্মাণ বন্ধের দাবিতে এই সমাবেশ হয়। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম
ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি সমাবেশের আয়োজন করে।
সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন
বাস্কের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির
কোষাধ্যক্ষ প্রিসিলা মুরমু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুফল হেমব্রম,
গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সিরাজুল
ইসলাম বাবু, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর
কবির, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের সদর উপজেলার আহবায়ক গোলাম
রব্বানী মুসা, মানবাধিকার কর্মী সহিদুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টি
(মার্কসবাদী) নেতা মৃনাল কান্তি বর্মন, সাঁওতাল নেতা শ্যামল মার্ডি,
মানিক সরেন, বাবলু টুডু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় সাঁওতালদের পৈতৃক জমিতে
ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। ইপিজেড নির্মাণে
বাংলাদেশ এ·পোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটিকে (বেপজা) দায়িত্ব দেয়া
হয়েছে। এখানে ইপিজেড নির্মাণ করা হলে সাঁওতালদের বাপ-দাদার জমি
থাকবে না। তাই এখানে ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে। সরকার
এখানে ইপিজেড নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত
থাকবে।
বক্তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো ফসলি জমি
নষ্ট করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নয়। এ ছাড়া কোনো জাতিকে পেছনে ফেলে দেশের
উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা
উপে¶া করে তিন ফসলির জমিতে ইপিজেড গড়ার পাঁয়তারা করছে। এই জমি
একসময় সাঁওতালদের বাপ-দাদার জমি ছিল। সেখানে আখের চাষাবাদ হতো।
চিনিকল যে শর্তে জমি অধিগ্রহণ করেছিল, তা ভঙ্গ হয়েছে। ফলে ওই জমি
পৈতৃকসূত্রে সাঁওতাল বাঙালিরা মালিক।
বক্তারা বলেন, জমির জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে তিন সাঁওতালকে জীবন দিতে
হয়েছে। বর্তমানে জমিতে তাঁরা ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করছেন।শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার অনেক জায়গা সরকারের পতিত রয়েছে। সেখানেও ইপিজেড
হতে পারে। কিন্তু সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে ইপিজেড নির্মাণ যুক্তিযুক্ত নয়।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত রংপুর চিনিকল সূত্র জানায়,
সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর
জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। কিন্তু
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপ¶ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদের
উদ্দেশ্যে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল নিহত, অন্তত
২০ জন আহত হন। এরপর থেকে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। জমি
উদ্ধারে গঠিত হয় সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। এ
রকম পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ এ·পোর্ট প্রসেসিং
জোন অথরিটি (বেপজা) সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের
উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থানীয় সাঁওতালরা এখানে ইপিজেড না করার জন্য আন্দোলন
করছেন।