শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মানাতে পারেনি ইউএনও আবদুল করিমকে
ছোটবেলায় পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে এক পায়ের সমস্যা হওয়ায় হাঁটা-চলা করতে পারতেন না। মা এবং ভাই-বোনের কোলে চড়েই স্কুলে যেতেন। সম্মুখীন হয়েছেন নানা সমস্যার। তারপরও থেমে থাকেননি। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সহযোগিতা আর কঠোর পরিশ্রমে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। একসময় অন্যের সাহায্য নিয়ে পথ চলা আবদুল করিম সাত্তার এখন একটি উপজেলার ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার উৎস।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবদুল করিম সাত্তার। বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামে। দুই বছর বয়সে পোলিও রোগে ডান পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসা করেও পুরোপুরি ভালো না হওয়া অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারতেন না।
কখনও মা, কখনও ভাই আবার কখনও বোনের কোলে চড়েই স্কুলে যেতেন তিনি। পরিবারসহ সবার সহযোগিতায় কাশিমপুর-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শেষ করে কাশিমপুর এ কে ফজলুল হক উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন।
পরে রাজশাহী নিউ গভর্মেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে রাজশাহী কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর প্রথমে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে চাকরি পান। পরে ৩১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। ২০১৩ সালে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগদান করেন।
আবদুল করিম সাত্তার বলেন, প্রতিবন্ধকতা আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমাজের বোঝা না হয়ে সম্পদ হতে কঠোর পরিশ্রম করেছি।তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জেলায় ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারি কমিশনারের পর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালের শুরুর দিকে যোগদান করেন হরিপুরে। কাজ করতে চান মানুষের জন্য। প্রতিবন্ধী হয়েও প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কজে অংশ নিয়েছি। চেষ্টা করি মানুষের সেবার জন্য।
হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নগেন কুমার পাল আরটিভি নিউজকে বলেন, বর্তমান ইউএনও শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও কাজে কর্মে তাকে কখনই প্রতিবন্ধী মনে হয় না। তার মধ্যে যথেষ্ট মানবিক গুনাবলি রয়েছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মংগা আরটিভি নিউজকে বলেন, অনেক ইউএনও দেখেছি। উনার মত আগের কোন ইউএনও এত বেশি সময় দিতো না। তিনি অফিসে বসেই দুপুরের খাবার খান। সময় নষ্ট হবে বলে বাড়ি যান না। সাধারণ মানুষের জন্য তার অফিসের দরজা সব সময় খোলা থাকে। কোনো কাজে দেরি করেন না।