জিরাতিরা থাকেন গলাঘরে, কিশোরগঞ্জের খাদ্য সৈনিকদের খোঁজ রাখে না কেউ

Share the post

আকিব হৃদয়, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কিশোরগনজ হাওরের খাদ্য সৈনিকদের খোঁজ রাখে না কেউ কাদামাটিতে সারি সারি রোপণ করা হয় ধানের চারা। একসময় বাড়তে থাকা সবুজ ধানের চারায় পরাগায়ন হয়। দেখতে দেখতে চারপাশ ভরে যায় সোনালী রঙের ছটায়। যেন একটি স্বপ্নের পথচলা। আর এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়া পর্যন্ত বছরের অর্ধেক সময় হাওরে পড়ে থাকেন একদল কৃষক। যারা এলাকায় পরিচিত জিরাতি নামে। বোরো মৌসুমে কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম-এ তিনটি হাওর উপজেলায় ধানক্ষেতের পাশেই অস্থায়ী কিছু ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়। যা গলাঘর নামে পরিচিত। কার্তিক থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে এসব গলাঘরে বসবাস করেন বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২৫ হাজার কৃষক। কিন্তু তাদের নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার কিংবা রাতে ঘুমানোর মতো জায়গা। গবাদিপশুর সঙ্গে গাদাগাদি করেই থাকেন তারা। ঝড় আর বজ্রপাতে ঝুঁকির মধ্যেই কষ্টে বোনা ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত পরিশ্রম করেন। জমি তৈরি করা, চারা রোপণ, সেচ, পরিচর্চা থেকে শুরু করে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই শেষে নতুন ধান সঙ্গে নিয়ে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বাড়ি ফেরেন তারা। ফলন ভালো হলে তাদের মুখে হাসি ফোটে। ভুলে যান পেছনের দুঃখ-কষ্ট।

আবারও প্রস্তুতি নেন পরের বার হাওরে যাওয়ার। হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ছোট্ট কুঁড়েঘরে বসবাস করা জিরাতিরা ঘরের মাচায় স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ঘুমান। মাচার পাশেই থাকে গবাদি পশু। চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বসবাস করা এসব মানুষের ভাগ্যে জোটেনা পুষ্টিকর খাবার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মোটা ভাত আর মরিচ ভর্তা, পাল কিংবা পানতা ভাত দিয়ে চলে খাবার। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। প্রকৃতির কাজ শেষ করতে হয় ক্ষেতের পাশেই। ইটনা উপজেলার বড়িবাড়ি ইউনিয়নের কুনিয়ার হাওরে কথা হয় কৃষক ফজলুর রহমানের সঙ্গে। করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর এলাকা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘খাল-বিলের পানি খেতে হয়। টিউবওয়েলের পানিতে আয়রন বেশি। গন্ধ করে। তাই বাধ্য হয়ে খালের পানি খাইতে হয়।’ মনসেন্তাষ গ্রামের কৃষক মোতালিব বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থাইক্যা জিরাতি করি। কি করব? মরিচ, ভর্তা ,আলু যাই পাই খাওন লাগে। ঘরের ভেতরে গরু রাখি লগে। আমরা থাহি মাচানের ওপরে। ভয়তো করেই। আল্লার ওপর ভরসা কইরা থাহি।’ তাড়াইলের জিরাতি কাঞ্চন মিয়া বলেন, ‘এই সরকারের আমলে হাওরের উন্নতি হইসে। কিন্তু কৃষকের খবর কেউ লয় না। নিজেরা যতই কষ্ট করি, হাওরে মাটির রাস্তা করে দিলেও মাঠ থেকে সহজে ধানগুলো আনা যাইত।’

নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুগের পর যুগ ভূমিকা রাখছেন তারা। কিন্তু এসব খাদ্য সৈনিকদের খবর নেয় না কেউ। তাদের জীবনমান উন্নয়ন কিংবা সামান্য বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা হলে দেশের জন্য তারা আরও বেশি অবদান রাখতে পারবেন বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ছাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এসব জিরাতিরা ছয় মাসে হাওরে অমানবিক জীবন-যাপন করে। তাদের থাকা, খাওয়া ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে খাদ্যশস্য উৎপাদনে তারা আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারতো। তবে স্থানীয়ভাবে আমাদের সেই সুযোগ নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

দুর্গাপুরের পাহাড়ী আদিবাসীদের, বিশুদ্ধ পানির কষ্ট চরমে

Share the post

Share the postতোবারক হোসেন খোকন,দুর্গাপুর (নেত্রকানা) প্রতিনিধি : অতিরিক্ত তাপদাহে বিপর্যস্ত পাহাড়ি অঞ্চলের জনজীবন। পাহাড় ও টিলাবেস্টিত নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর সদর ও কুল্লাগড়া ইউনিয়ন। সেখানে গাড়ো, হাজং ও বাঙালী মিলিয়ে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। গত তিনদিনের গরমে বেড়েছে তীব্র তাপদাহ। সেইসাথে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এতে ডায়রিয়া সহ নানা রোগে আক্রান্তও হচ্ছেন […]

‘ডি’ ইউনিটের মাধ্যমে শেষ হলো ইবির ভর্তি পরীক্ষা

Share the post

Share the postসুবংকর রায়, ইবি প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইসলাম শিক্ষা ও ধর্মতত্ত্ব অনুষদভুক্ত স্বতন্ত্র ‘ডি’ ইউনিটের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সম্মান প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। উপস্থিতর হার ছিল প্রায় ৯১ শতাংশ। রবিবার (১১ মে) দুপুর ১ টায় ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবম সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী […]