পতিত জমিতে মাল্টা চাষ করে, যুবকদের উদ্দ্যেক্তা করে তুলছেন – রনি মিত্র

Share the post

তোবারক হোসেন খোকন, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: যেদিতে চোখ যায়, শুধু মাল্টা ফলের বাগান। থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ ভিয়েতনাম জাতের মাল্টা। বাগানের গাছের ডাল গুলো যেনো মাল্টার ভারে নুয়ে পড়ছে। পতিত জমিতে মাল্টা আবাদ করে একজন সফল উদ্দ্যোক্তা হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বিজয়পুর এলাকার রনি মিত্র। এই বাগান থেকে বছরে আয় করছেন ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। রনি মিত্র, নিকুঞ্জ মল্লিক ও সুমন মল্লিকের এই মাল্টাবাগান দেখে স্থানীয় যুবকরা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

 

রনি মিত্রের মাল্টার বাগান পরিদর্শন করে জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে এক একর পতিত জমিতে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় গড়ে তুলেছেন এই বিশাল মাল্টার বাগান। প্রথমে ৩শতাধিক এবং পরে আরে ২শত চারা রোপন করেছেন তিনি। বর্তমানে বাগানে প্রায় ৫ শতাধিকের বেশি চারা রয়েছে। চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যেই মাল্টা বিক্রি শুরু করেছেন রনি মিত্র। ওই এলাকার কয়লা পোর্টের মামা-ভাগ্নের অনাবাদি পতিত এক একর জমিতে মাল্টার গাছ লাগিয়েছিলেন রনি। এই পতিত জমি প্রস্তুত, রাসায়নিক ও জৈব সার প্রদান, বিদ্যুৎ নামানো, শ্রমিক খরচ মিলে এ পর্যন্ত প্রায় ১২লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাগানে ৫ শতাধিকের বেশি চারা রয়েছে। চারা রোপণের দুই বছরেই মাল্টার বাজার জাতকরণ করতে পেরেছেন তিনি। প্রথম বছরেই মাল্টা বিক্রি করেছেন প্রায় দুই লাখ টাকার মতো। তবে এ বছর যে পরিমান মাল্টার ফলন হয়েছে তাতে ৪ থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকার অধিক বিক্রি করতে পারবেন। এর পরের বছর মাল্টা বিক্রি এর দ্বিগুন হবে বলেও জানা তিনি। ভিয়েতনাম জাতের মাল্টা সুস্বাদু, রসালো ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রনি মিত্রের মাল্টা বাগান দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবকগণ বাগান করার স¦প্ন দেখছেন। যুবকদের নিজের বাগানে এনে নানা পরমর্শ দিয়ে চাকরির আশায় বসে না থেকে, নিজের শ্রমেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করার পরিকল্পনাকারী হিসেবে গড়ে তুলতে পরিশ্রমও করে যাচ্ছেন তিনি।

 

পাইকারী দরে মাল্টা নিতে আসা ব্যবসায়ী মিলন মিয়া জানান, বর্তমান পাইকারী মুল্যে আমরা ২,৬০০/- টাকায় প্রতিমন মাল্টা ক্রয় করতেছি। ভিয়েতনাম জাতের মাল্টা খুবই সুস্বাদু, রসালো ও স্বাস্থ্যসম্মত। যে কারণে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। এখানের মাটি যে উর্বর, যদি সোমেশ^রী নদীতে যদি একটা ব্রিজ থাকতো, তাহলে বিজয়পুর এলাকার ফসল দিয়েই বৃহত্তর ময়মনসিংহে কৃষি বিপ্লব ঘটানো যেতো।

অপর এক ব্যবসায়ী হারিছ মিয়া বলেন, এই বাগান থেকে মাল্টা নিয়ে আমরাও লাভবান। বাগানের ফলন যেভাবে আসছে, কয়েক বছরের মধ্যেই সকল খরচ উঠে যাবে। বিক্রি বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। মাত্র আড়াই বছর বয়সী একেকটি গাছে দুই মণ পর্যন্ত মাল্টা ধরেছে। গাছের বয়স ও আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাল্টার পরিমাণ ও স্বাদ বাড়তে থাকে। এ দেখে আমি নিজেও মাল্টা চাষ করবো ভাবছি।

 

রনি মিত্র জানান, পরিশ্রম কখনোই বৃথা যায়না। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে এই বাগান করেছি আমি। গত বছরের তুলনায় এ বছর যে পরিমাণ ফলন হয়েছে তাতে তার সব খরচ মিটিয়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লাভবান হবে। আগামী বছর এর পরিমান দ্বিগুন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার অধিক বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী। কিন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় বিক্রি নিয়ে একটু চিন্তায় আছি।

 

তিনি আরো বলেন, যুবরাই পারে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোড়াতে। বিজয়পুর এলাকার মাটি যে উর্ব্বর, সোমেশ^রী নদীতে যদি একটা ব্রিজ থাকতো, তাহলে বিজয়পুর এলাকার যুবদের উৎপাদিত ধান, রবিশস্য এবং উৎপাদিত ফল বিক্রি দিয়েই সরাদেশে দুর্গাপুর উপজেলাকে একটা অর্থনৈতিক জোন হিসেবে পরিচিতি করানো যেতো। এথেকে কর্মহীন যুবসমাজ একজন সফল উদ্দ্যেক্তা হিসেবে গড়ে উঠতো।

দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রায়হানুল হক বলেন, আশপাশের উপজেলার তুলনায় দুর্গাপুরে প্রায় সব ধরনের ফসলই ভালো হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানে দিন দিন বেড়ে চলেছে মাল্টার চাষ। অত্র এলাকার কর্মহীন যুবদের উদ্দ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছেন বাগানের মালিক রনি মিত্র। মাল্টা চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এই উপজেলার কৃষকরা।

 

রণি মিত্র মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। ভিয়েতনাম জাতের মাল্টা সুস্বাদু, রসালো ও স্বাস্থ্যসম্মত। ওনার বাগানে এ বছর যে পরিমাণ ফলন হয়ে তাতে তিনি অনেক বেশি লাভবান হবেন। মাল্টা বাগানের গাছ প্রতি ১৫-২০ কেজি হারে বাজারজাত করতে পারবে। তার এই সফলতার কারণ যদি বলি, সম্পুর্নই উনার আগ্রহ ও বাগানের যতœ নিয়েছেন বলেই সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের সহযোগিতা ছিল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নেত্রকোনায় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত 

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা : বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি নেত্রকোণা জেলা শাখার উদ্যোগে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) নেত্রকোণা আবু আব্বাস ডিগ্রি কলেজের হলরুমে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জানা গেছে, জেলার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা (৮ সেপ্টেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রেরিত চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তর থেকে […]

নেত্রকোনা শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে পৌর প্রশাসক আরিফুল ইসলাম সরদার

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা : নেত্রকোনা পৌরসভার উদ্যোগে শুরু হয়েছে বাস টার্মিনাল সহ বিভিন্ন সড়কের দুই পাশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এই অভিযানে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন পৌর প্রশাসক আরিফুল ইসলাম সরদার। বুধবার (২৯ অক্টোবর) ১২ থেকে ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকার রাস্তার দু’পাশে চলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। এ সময় পথচারী, ব্যবসায়ী, চালক ও যাত্রীদের উদ্দেশে ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে […]