রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকীতে শাহজাদপুরে ৩ দিনব্যাপী জন্মোৎসবের আয়োজন

Share the post
মো: সবুজ হোসেন রাজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃউনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্য ও বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারে এক বহুমুখী প্রতিভার নাম—নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর। সাহিত্যের গভীরতম উপাদান তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন এইখানেই, জমিদারি কাজের সূত্রে এসে। তিনি নিজেই লিখেছেন, এখানে (শাহজাদপুরে) আমার লেখার যে ভাব আসে, অন্য কোথাও তা না।
এই স্মৃতিবিজড়িত স্থান শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজিত হচ্ছে কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী। আজ ২৫ বৈশাখ (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী জন্মোৎসব, যার আয়োজন করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে জেলা প্রশাসক মোঃ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুল খালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক নিজেই। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নিসা। আলোচনায় অংশ নেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাফাত আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ আব্দুল খালেক বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুরে এসে এখানকার মাটি ও মানুষকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছিলেন। এখানেই রচিত হয়েছে সোনার তরী, পোস্টমাস্টারসহ বাংলা সাহিত্যের বহু অনন্য সৃষ্টি, যা আজও বিশ্ব দরবারে বাংলা সাহিত্যের গৌরব বৃদ্ধি করছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মোৎসব উপলক্ষে শাহজাদপুরের কাছারিবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা সাজানো হয়েছে নতুন রঙে। দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটক ও রবীন্দ্রভক্তদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে কাছারিবাড়ি প্রাঙ্গণ। চলছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও নানা আয়োজন।
শাহজাদপুরের এই কাছারিবাড়ি একসময় নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারির অংশ ছিল। ১৮৪০ সালে জমিদারিটি নিলামে ওঠে এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র তেরো টাকা দশ আনায় জমিদারিটি কিনে নেন। আগে কাছারিবাড়ির মালিক ছিলেন ব্রিটিশ নীলকর সাহেবরা।
১৮৯০ সাল থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত কবিগুরু জমিদারি দেখাশোনার কাজে শাহজাদপুরে আসতেন এবং এই সময়েই তিনি সাহিত্য চর্চায় ডুবে যান। শিলাইদহে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও শাহজাদপুর ছিল তাঁর সাহিত্যিক অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস।
কাছারিবাড়িটি ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি দ্বিতল ভবন। ভবনের দৈর্ঘ্য ২৬.৮৫ মিটার, প্রস্থ ১০.২০ মিটার এবং উচ্চতা ৮.৭৪ মিটার। এখানে রয়েছে সাতটি কক্ষ, প্রশস্ত বারান্দা, পোড়ামাটির শিল্পকর্ম ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলি—যা কবিগুরুকে বারবার টেনে এনেছে এখানে।
শাহজাদপুরে অবস্থানকালে কবি রচনা করেন সোনারতরী, বৈষ্ণব কবিতা, দুটি পাখি, আকাশের চাঁদ, পুরস্কার, যমুনা, হৃদয়, প্রত্যাখ্যান, চিত্রা, শীত ও বসন্তে, নগর সংগীত, মৃত্যু মাধুরী, প্রথম চুম্বন, শেষ চুম্বন, তৃণ, ইছামতী নদী, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথি, সম্পত্তি, ছুটি ইত্যাদি অসংখ্য কবিতা ও গল্প। এখানে বসেই তিনি লেখেন ৩৮টি ছিন্নপত্রাবলী, নাটক বিসর্জন, ও পঞ্চভূতের অংশবিশেষ।
শাহজাদপুরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আত্মিক সম্পর্ক আজও ছুঁয়ে যায় পাঠকের হৃদয়। কাছারিবাড়িতে বসে সৃষ্টি হওয়া তাঁর অমর সাহিত্যকর্ম আজও বাংলার মাটিতে আলো ছড়ায়। সেই আলোরই আরেক নতুন উৎসবমুখর উজ্জ্বলতা নিয়ে ফিরে এলো এবারের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিবেশ উপদেষ্টার পরিদর্শন: পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব আরোপ

Share the post

Share the postমো: সবুজ হোসেন রাজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃসিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত স্থায়ী ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের বহলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত প্রস্তাবিত স্থায়ী ক্যাম্পাস এলাকা ঘুরে দেখে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপিত হয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা […]

রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি খুলে দেওয়া হলো দুই দিন পর, জেলা প্রশাসকের আশ্বাস: “নিরাপত্তার ঘাটতি নেই”

Share the post

Share the postমো: সবুজ হোসেন রাজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে অডিটোরিয়ামে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও, ঘটনার দুই দিন পর তা আবার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (১৩ জুন) বেলা ১১টায় সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম এক দর্শনার্থীর হাতে প্রবেশ টোকেন তুলে […]