মেয়রের কক্ষ থেকে বের হয়ে কাঁদতে শুরু করেন মহিলা কাউন্সিলর
সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী (৫৮) এর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে আদালতে একটি মামলা হয়েছে।পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের একজন মহিলা কাউন্সিলর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এই মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এই মামলাটি দায়ের করেন নারী কাউন্সিলরমামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেছেন, ছাতক পৌরসভার সংরক্ষিত একটি ওয়ার্ড থেকে টানা দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গত নির্বাচনের পর থেকে পৌর মেয়র তাকে বিভিন্ন সময়ে কৌশলে অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন। তিনি মেয়রের এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মেয়র তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছিলেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এ কারণে পৌর নির্বাচনের পর থেকে তাকে কেবল হাজিরা খাতায় সাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। সব উন্নয়ন কাজ থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়।
এ অবস্থায় গত ২২ আগস্ট দুপুরে ছাতক পৌরসভায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের সঙ্গে মেয়রের কক্ষে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ডের দুজন এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিল হিসেবে তিনি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মেয়র জরুরি কাজের কথা বলে তাকে ওই কক্ষে বসতে বলেন। অন্যরা চলে যাওয়ার পর মেয়র চেয়ার থেকে উঠে পাশে এসে তার শরীরের বিভিন্নস্থান স্পর্শ করে শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি মেয়রের কক্ষ থেকে বের হয়ে কাঁদতে শুরু করেন এবং মুঠোফোনে বিষয়টি পরিবারের লোকজনকে জানান। তখন মেয়র কক্ষ থেকে বের হয়ে তাকে গালিগালাজ করেন এবং পৌর কার্যালয়ে যেতে নিষেধ করেন।
তবে এর আগে একই তারিখ ও প্রায় একই সময়ে ছাতক পৌর কার্যালয়ে একটি সভায় ভাংচুর ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে ওই মহিলা কাউন্সিলর, তার স্বামী ও দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় ২৭ আগস্ট দ্রুত বিচার আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন ছাতক পৌরসভার অফিস সহায়ক দিপ্ত বনিক।
এই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ছাতক পৌরশহরে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব বন্ধে পৌরসভার নানা ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু ওই নারী কাউন্সিলর ও মামলার অন্য আসামিরা এসব অটোরিকশা থেকে চাঁদা আদায় করছেন এবং এসব অবৈধ যান চলাচলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন। বিষয়টি নিয়ে অটোরিকশার চালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আসামিদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে অটোচালক ও মালিকেরা পৌর মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগও দেন। মেয়র অন্যান্য কাউন্সিলরদের নিয়ে ২২ আগস্ট দুপুরে পৌর কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এ সময় ওই নারী কাউন্সিলরসহ আরও ২০-২৫ জন লোক অস্ত্রশস্ত্রসহ ওই কক্ষে প্রবেশ করে উপস্থিত সবাইকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালজ শুরু করেন এবং পৌরসভায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ করা যাবে না বলে হুমকি দেন। এ নিয়ে কথা কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আসামিরা পৌরসভা কার্যালয়ে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন এবং বিভিন্ন কক্ষের দরজা-জানলা ভাংচুর করেন।অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর মোবাইলে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।উল্লেখিত, ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী অবিবাহিত। তিনি বিয়ে করেননি।