ভোলায় আন্তর্জাতিক প্রসবকালীন ফিস্টুলা নির্মূল দিবস ২০২৫ পালিত
ভোলা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি, ‘ফিস্টুলা কর্নার’ উদ্বোধন এবং বিশেষ আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তুম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সমিতির (বিপিএস) মহাসচিব প্রফেসর ডা. আব্দুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিআইপিআরবি-র পরিচালক (আরসিএইচ) প্রফেসর ডা. মো. আব্দুল হালিম।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন গাইনী বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সুরাইয়া ইয়াসনুর, সদর উপজেলার ইউএইচএফপিও মোঃ মনিরুল ইসলাম, নার্সিং তত্ত্বাবধায়ক খালেদা বুসমিন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের অধ্যক্ষ নন্দা রানী দাস, জাপাইগো-এর জেলা এসআরএইচআর সমন্বয়কারী ডা. নিপা রানী, পরিবার পরিকল্পনা ফ্যাসিলিটেটর সন্তোষ কুমার মন্ডল, সিআইপিআরবি’র জেলা সমন্বয়কারী আলমগীর হোসাইন লিবুল এবং মোঃ আলতাফুর রহমানসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
বক্তারা বলেন, দেশে ফিস্টুলার হার কমলেও এখনও এ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ নারী এই রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার নারী। প্রতিবছর দেশে নতুন করে যুক্ত হন প্রায় ২ হাজার রোগী। এই বাস্তবতায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নিরাপদ মাতৃত্ব, ও সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়।
সভায় জানানো হয়, ভোলা জেলায় ‘‘ফিস্টুলা নির্মূলকরণ কার্যক্রম ২০৩০’’ এর আওতায় দৌলতখান উপজেলায় গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ, ইউএনএফপিএ ও সিআইপিআরবি’র যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই ক্যাম্পেইনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফিস্টুলা সন্দেহভাজন রোগীদের তালিকা করা হয়।
এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ১৫ জন সন্দেহভাজন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জনের ফিস্টুলা রোগ নিশ্চিত হয়। ৪ জনকে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য ঢাকার ন্যাশনাল ফিস্টুলা সেন্টারে রেফার করা হয়। ইতোমধ্যে ২ জন রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন এবং পুনর্বাসন সহায়তা পেয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ভোলা একটি দুর্গম ও দুর্যোগপ্রবণ জেলা হওয়ায় এখানকার চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকায় আরও অনেক অজ্ঞাত রোগী থাকতে পারেন। তাই ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং মাঠ পর্যায়ের প্রচারণা চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তুম বলেন, “বাল্যবিবাহ রোধ ও হাসপাতালে নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করতে হবে। মাঠকর্মীদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা ফিস্টুলা প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বলেন—“ফিস্টুলা প্রতিরোধ সম্ভব সচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসা ও সম্মানজনক মাতৃসেবার মাধ্যমে। ভোলায় আমরা চাই, আর কোনো নারী যেন এই দুর্ভোগে না পড়েন। আসুন, সবাই মিলে গড়ি একটি ফিস্টুলামুক্ত ভবিষ্যৎ।”