নেত্রকোনায় মৌসুমেও হাওরে তেমন দেখা মিলছে না দেশীয় মাছের

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় ভরা মৌসুমেও মিলছে না দেশীয় প্রজাতির মাছ। এখন চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। চারদিকে খালে বিলে ব্যাঙ ডাকে। এ প্রবাদগুলো যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সঠিক সময়ে পানি আসছে না হাওরে। যার ফলে তেমন দেখা মিলছে না দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের।এমতাবস্থায় বাধ্য হয়েই জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারে চাষের মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে জেলেদের। এছাড়াও দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছও এখন রয়েছে বিলুপ্তির পথে। হাওরপাড়ের বাসিন্দারা বলছেন, মাছের ভরা মৌসুমেও মাঝামাঝি সময় চলে আসলেও হাওরে দেখা নেই কাঙ্খিত পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির মাছ। আর নতুন পানির দেশীয় মাছ বাজারে উঠছে না।
জানা যায়, হাওর-বাওর বেষ্টিত নেত্রকোনা জেলা। এ জেলাটি বিভিন্ন কারণে দেশের শীর্ষে রয়েছে। তেমনি একটি কারণ মাছের প্রাচুর্য। হাওর অঞ্চল হওয়ায় এখানকার অধিকাংশ মানুষের বর্ষা কালের প্রধান কাজ মাছ শিকার বা চাষ। মাছ চাষ করে এখানকার লোকজন দেশের উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছেন। কেউ লিজ নিয়ে, কেউবা নিজের পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এখানকার অনেক লোক পুকুরে মাছ চাষ না করেও বিভিন্ন হাওর থেকে মাছ আহরণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের উন্নয়ন করছেন। এক সময় নেত্রকোনায় প্রচূর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া স্বপ্নের মতো মনে হয়। জেলার মোহনগঞ্জ, মদন ও খালিয়াজুরী, উপজেলাতে বেশিরভাগ মানুষ মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার মানুষ বেকার হয়ে পড়ায় তারা বেছে নেন মাছ শিকার। এই জেলায় রয়েছে কংশ, মগড়া, সোমেশ্বরী, ধনাইখালী, উদ্ধাখালী,ও ধনু নদী। আরো আছে অসংখ্য খাল-বিল, ডোবাসহ নানা প্রাকৃতিক জলাশয়। আর এ কারণেই এখানে বেশি পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়।
যদিও এবার জলাশয়গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শৈল, গজার, শিং, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, টেংরা, চিংড়ি, বোয়াল, বাউস, আইড়, টাকি, বাইম, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে না। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় জলাশয়ের পরিমাণ ৯০ হাজার ১৩৫ হেক্টর। গত দুই তিন বছর আগেও যেখানে মাছ উৎপাদন হতো ২৮ হাজার ৪০০ টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা হতো ঢাকা সহ বিভিন্ন দেশে, সেখানে এবার স্থানীয় চাদিহা মেটানো সম্ভবপর হচ্ছে না।জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, এখানকার পানির মাছ এক সময় ঢাকা সহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হতো। কিন্তু দিন দিন দেশীয় মাছের উৎপাদন কমে আসায় এখন স্থানীয় চাহিদা মেটানোই সম্ভবপর হয়ে উঠঠে না। যদিও পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মাছের পরিমাণও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা।
নেত্রকোনার স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বলছেন,এবার জেলার হাওরে যা পানি রয়েছে সেগুলো বৃষ্টির পানি। ঢলের পানি হাওরে আসেনি। ফলে হাওরে পর্যাপ্ত পানি না আসায় দেশীয় মাছ বৃদ্ধি পাচ্ছে না।নেত্রকোনা শহরের মাছুয়া বাজারে মাছ ক্রয় করতে আসা তারেক মিয়া জানান, এখন বাজারে যে মাছ আসছে বেশিরভাগ মাছ চাষের। আর যে অল্পপরিমাণ দেশীয় মাছ বাজারে আনা হচ্ছে তার দাম আকাশ চুম্বি। তাই সাধারণ মানুষের পক্ষে এখন দেশীয় মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। আব্দুর রহমান নামে আরেক ব্যক্তি জানান, দেশীয় মাছ কিনে খাওয়া এখন গরিবদের জন্য স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষরা এখন বেশি চাষের মাছের প্রতিই ঝুঁকছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবির বলেন, এবার হাওরে দেরীতে পানি আসায় দেশীয় মাছের প্রজনন অনেকটা ব্যবহৃত হচ্ছে। হাওরে ছোট ও মা মাছ রক্ষায় জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এই মাসের শেষ নাগাদ হাওরের পানি কমতে পারে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

একই স্থানে তৃতীয় হত্যাকাণ্ড: আতঙ্কে সিরাজগঞ্জের শিয়ালকোলবাসী

Share the post

Share the postজলিলুর রহমান জনি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : রহস্যে ঘেরা মঞ্জু মিয়া হত্যার ঘটনায় এলাকায় উদ্বেগ।ভোররাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ক্ষুদ্র শিয়ালকোল গ্রামের পাকা রাস্তার পাশে মিলল এক যুবকের নিথর দেহ। চারদিকে রক্তের দাগ, পাশে পড়ে আছে মোটরসাইকেলটি। নিহতের নাম মঞ্জু মিয়া (৩৮)। তিনি সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের সরাইচন্ডী গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর ছেলে। বৃহস্পতিবার (৯ […]

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা গোয়েন্দা শাখার অভিযানে মাদক কারবারী গ্রেফতার,ও গাঁজা উদ্ধার।

Share the post

Share the postমোঃ শামীম মিয়া ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি চৌকস টিম ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুর ১২:৫০ মিনিটে সদর থানাধীন বাসুদেব ইউনিয়নের বরিশল এলাকা থেকে ১ জন মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তার কাছ থেকে মোট দশ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকসহ আসামিকে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জব্দ […]