সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : পেশায় রিকশা চালক। বাড়ী নেত্রকোনা সদর উপজেলার দুগিয়া এলাকায়। তিন মাস আগে তিনি বাড়িতে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পেয়েছেন। পল্লী বিদ্যুতের মিটারটি তার দিনমজুর ছেলে রানা আহম্মেদের নামেই। দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘরে তিনটি বৈদ্যুতিক বাল্ব আর দুটি ফ্যান চালান। বিদ্যুতের আলো পেয়ে বেশ খুশি হয়ে ছিলেন নিজাম আলী। প্রথম দুই মাস বিদ্যুৎ বিলও ঠিকঠাক ছিল। মার্চ মাসে তার বিদ্যুতের বিল আসে ১০২ টাকা। এপ্রিলে ১৪৩ টাকা। কিন্তু মে মাসের বিল দেখে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার। মে মাসে বিল এসেছে এক হাজার ৫০০ টাকা। দুই মাস মিলিয়ে যেখানে ২৪৫ টাকা বিল এসেছে। সেখানে এক মাসেই পনেরশ’ টাকা। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে গ্রাহকদের ভিড়। বেশিরভাগ গ্রাহকের অভিযোগ ভুতুড়ে বিল। সেই সাথে পরিশোধিত বিলও নতুন বিলের সাথে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুতুড়ে বিলের কারণ জানতে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে এসেছেন নিজাম আলী। সাথে পুত্রবধূকেও নিয়ে এসেছেন। এক ঘণ্টা ধরে ঘুরেও কোনো সমাধান মেলেনি। নিজাম আলী বলেন, ‘তিনটা এনার্জি বাল্ব আর দুটো ফ্যান চলে। প্রথম মাসে ১০২ টাকা এলো। পরের মাসে ১৪৩ টাকা। আর মে মাসের বিল এসেছে ১৫০০ টাকা। এত টাকার বিল আসার কোনো কারণই নেই। এক মাসে একবারে এত টাকা বিল হলো কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত দুই মাস যা বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে, মে মাসেও তো একইভাবে ব্যবহার হয়েছে। এতো বিল আসার মতো কোনো কারণই ঘটেনি। কীভাবে এতো টাকা বিল এলো আমি বুঝতে পারছি না। সে ই কারণ জানতে অফিসে এসেছিলাম। ঘুরে ঘুরে কোনো লাভ হলো না। অফিস থেকে বলা হলো- বিল যা এসেছে তাই দিতে হবে। সমস্যা মনে করলে মিটার পাল্টানোর পরামর্শ দিয়েছেন। ইতোপূর্বে জমা দেওয়া বিদ্যুৎ বিল নতুন বিলের সাথে তুলে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ নিয়ে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে আসেন সদর উপজেলার আমতলা এলাকার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক জাহাঙ্গীর আলী।
বারহাট্টা উপজেলার খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘এপ্রিল মাসের দেওয়া বিল এমাসের বিলের সাথে যোগ করে দিয়েছে। এখান থেকে ঠিক না করে নিলে তো বেশি টাকা দেওয়া লাগবে। আসতে যেতে আমার ১০০ টাকা খরচ হয়েছে। আবার আজকে কাজেও যেতে পারিনি।সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা এলাকার গ্রাহক ফারুক এসেছে হঠাৎ অতিরিক্ত বিল এসেছে এবং গড় বিল কীভাবে করেছে তা জানতে। সেই সাথে তিনি অভিযোগ করেন এ মাসে বিল অনেক বেশি এসেছে। তিনি বলেন, সব সময় জরিমানা নেওয়া হবে না এমনটি বলছে কিন্তু ঠিকই একটার উপর আরেকটা চাপিয়ে দিয়ে জরিমানা আদায় করছে। একবারে বেশি ইউনিট দেখিয়ে অতিরিক্ত ধাপ দেখিয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে। গড় বিল তো ব্যবহারের গড় করার দরকার। কিন্তু তারা ডবল করে দিয়েছে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে প্রায় তিন থেকে চারশ’ গ্রাহক এসেছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের অভিযোগ ভুতুড়ে বিল, গড় বিলে বেশি টাকা নেওয়া এবং পরিশোধ করা বিল পরের মাসের বিলের সাথে যুক্ত করে দেওয়া। এদিকে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে দেখা গেলো উল্টো চিত্র। একে অপরের খুব কাছাকাছি লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাতে দেখা যায় গ্রাহকদের। তবুও দিতে পারছে না বিল। নাম প্রকাশ না করা শর্তে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এক ব্যক্তি জানান, জেনারেল ম্যানেজারের কাছে নেত্রকোনায় প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকই বন্দি। এপ্রিল মাসের বিল অফিসে বসেই করেছে। তবে প্রায় সবারই বিল ডবল করেছে।
এদিকে বারহাট্টায় সাধারণ মানুষ অভাবে রয়েছে, কাজ নেই। সরকার তাই গড় বিল করতে বলেছে। কিন্তু নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ডবল করে গড় বিল লিখে দিয়েছে। ডিমান্ড চার্জ ডবল করেছে। এসব টাকা কোথায় যায় তার কোন হদিস নাই। তিনি নিজেও ভুক্তভোগী দাবি করে ওই এলাকা এক ব্যক্তি বলেন, ‘অভিযোগ দেবো কার কাছে? আমি নিজেও এই প্রতারণার শিকার। আমারও বিল বেশি এসেছে। জেনারেল ম্যানেজারকে এসব অভিযোগের ব্যপারে জানালে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। বিষয়গুলো নিয়ে কথা হলে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মাসুম আহমেদ বলেন, যে অভিযোগটি পাওয়া গেছে, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি‘। তিনি বলেন,মিটার দেখে দেখে বিল করা হয়েছে। তাই বিলও সঠিক হয়েছে। এতে বেশি বিল ওঠার কোনো কারণ নেই। গ্রাহক যা ব্যবহার করেছে, বিলও সেটাই উঠেছে। এরপরও যদি বিলের কোনো সমস্যা হয়, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।