

সুবংকর রায়, ইবি প্রতিনিধি:আজ দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম হোলি উৎসবে মেতে উঠেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।
তেমনি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসেও আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা বা হোলি। এছাড়াও উৎসব উপলক্ষে মন্দিরে পূজা অর্চনা, প্রসাদ বিতরণ ও মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজনও করেন শিক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে অবস্থিত মন্দিরে ঘট স্থাপন’সহ পূজার কার্যাদির মাধ্যমে শুরু হয় এই উৎসব। পরবর্তীতে আবিরের রঙে রঙিন হয়ে উঠে টিএসএসসি প্রাঙ্গণ।
এসময় দেখা যায়, বিভিন্ন রংয়ের আবির নিয়ে হোলি খেলায় মেতে উঠেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের গালে, মুখে দেখা যায় আবিরের রঙ। মেখেছেন সারা গায়েও। কেউবা স্বেচ্ছায় রঙ মাখছেন আবার কেউ একে অপরকে জোর করে মাখিয়ে দিচ্ছেন। এ যেন এক অন্যরকম ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। এই আনন্দঘন মুহুর্তে সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা বলেন, দোল উৎসব হল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব। এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধা ও গোপীদের সঙ্গে রঙের খেলা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে দোলযাত্রা বা হোলি উৎসবে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের জন্য এটি অত্যন্ত পবিত্র দিন, কারণ এই দিনে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব হয়। দোল পূর্ণিমা আমাদের জীবন থেকে সব বিভেদ দূর করে ঐক্যের বার্তা দেয়। এছাড়াও এটি মূলত ভালোবাসা, ভক্তি ও আনন্দের প্রতীক।
অন্যদিকে, হোলি উৎসবটি পালিত হয় প্রহ্লাদের হিরণ্যকশিপুর বিরুদ্ধে বিজয়ের স্মৃতিতে। এটি শুভ শক্তির জয় এবং অশুভ শক্তির পরাজয়কে উদযাপন করে, যা পৃথিবীজুড়ে ভালোর প্রতি শ্রদ্ধা এবং দুষ্টের পরাজয়ের বার্তা পৌঁছে দেয়।
সনাতন ধর্মাবলম্বী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী চন্দ্রা বিশ্বাস তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের পূজা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত এবারের দোলযাত্রা একটু ভিন্নধর্মী ছিল। রমজান মাস এরপর আবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ তাই কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে এবারের দোলযাত্রা। সকাল বেলা অঞ্জলী দেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমাদের দোলযাত্রা। ঈশ্বরকে স্বরণ করে সবাই মেতে ওঠে আবির খেলায়, এরপর প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়েই শেষ হয় আমাদের দোলযাত্রা। ক্যাম্পাস বন্ধের মধ্যেও যে আমরা এত সুন্দর একটা আয়োজন করতে পেরেছি এজন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতেও যেনো আমাদের মাঝে এই সম্প্রীতি বজায় থাকে এই কামনা করি।’
মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জয় দাশ বলেন, ‘প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও আমাদের ক্যাম্পাসে দোল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। তবে আমার জন্য ক্যাম্পাসে এটা প্রথম দোল উৎসব। সুতরাং এবারের দোলের অনুভূতিটা কিছুটা ভিন্ন ও বিশেষ। রমজান মাস বিধায় যতটা সম্ভব ক্ষুদ্র পরিসরে উদযাপন করার চেষ্টা করেছেন সিনিয়র দাদারা। বড়দের সাথে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া, আবির খেলা, ভজন-কীর্তন, একসাথে বসে প্রসাদ পাওয়া সবকিছু মিলিয়ে দারুণ এক অনুভূতি যা বলে বোঝানো যাবে।
ধন্যবাদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পূজা উদযাপন পরিষদ’কে এত সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য।’
আজকের উৎসব সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ রায় বলেন, ‘আমরা আজ সারা দিনব্যাপী প্রার্থনা ও উৎসব আয়োজন করেছি। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে গেছে। তবে ক্যাম্পাসে অবস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রায় সবাই এতে অংশগ্রহণ করেন। এ বছর যেহেতু রমজান মাস চলছে তাই আমরা একটু ছোট পরিসরে এবছরের উৎসব আয়োজন করেছি।’