কুষ্টিয়ায় আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টুকে গুলি করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার

Share the post
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈমুদ্দিন সেন্টু হত্যা মামলার প্রধান আসামি মোঃ তরিকুল ইসলাম টুকু গ্রেফতার হয়েছে। র‍্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈমুদ্দিন সেন্টু (৫৮)কে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দুষ্কৃতিকারীরা ইউনিয়ন পরিষদের নিজ কার্যালয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।  হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে নিহতের ছেলে বাদী হয়ে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-১, তারিখ ১/১০/২০২৪, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। মামলার এজাহার নামীয় আসামিদের গ্রেফতারের জন্য সিপিসি-১, কুষ্টিয়া গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১২, সিপিসি-১, কুষ্টিয়া ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল ১৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ রাত ১০:১০ ঘটিকার সময় র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও ১ নং এজাহার নামীয় আসামি মোঃ তরিকুল ইসলাম টুকু(৪৫) কে পাবনা থানাধীন গোবিন্দপুর গ্রাম হতে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানাগেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের চরাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বাহিনী প্রধানসহ সন্ত্রাসীদের দমন ও সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার কারণেই ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এমন দাবি তার পরিবারের সদস্য, স্বজন ও স্থানীয়দের। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রশাসনের নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে সন্ত্রাসীরা সংগঠিত হয়ে ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। এরই জের ধরে পরিকল্পিতভাবে চেয়ারম্যানকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের দাবি। এ হত্যাকান্ডের মূল হোতা তরিকুল ইসলাম টুকু বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে এবং তাকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে। টুকুর পরিকল্পনায় ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী ৬-৭ জনের সন্ত্রাসী দল সরাসরি হত্যা বা কিলিং মিশনে অংশ নেয়।  সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের নিজ কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নঈম উদ্দিন সেন্টু (৬৫)। এলাকার সাধারণ মানুষ ও নিহত চেয়ারম্যান সেন্টুর পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠি ও সংগঠন (লালচাঁদ বাহিনী, পান্না বাহিনী, ছাপাত বাহিনী। এর মধ্যে অন্যতম ছিল লালচাঁদ বাহিনী। এর বাহিনী প্রধান ছিল লালচাঁদ নিজেই। সে চরাঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তৎকালীন সময়ে অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় বিএনপি নেতাদের আশ্রয় প্রশয়ে লালচাঁদ পদ্মার চরে এই সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। সেসময় দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ এই বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। ওই বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়নি এমন পরিবারের সংখ্যা ছিলনা বললেই চলে। ওই সময় চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টুও ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর তোপের মুখে ও রোষানলে পড়ে। এলাকায় শান্তি ফেরাতে সেন্টু চেয়ারম্যানের ভাই শিল্পপতি আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে তদবির করে ফিলিপনগর এলাকায় একটি র‌্যাব ক্যাম্প স্থাপন করেন। এরপর র‌্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। বাহিনী প্রধান লালচাঁদ সহ তার বাহিনীর অনেকে নিহত হয় ও এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয়। সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান লালচাঁদের মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু ও তার লোকজন সে সময় আনন্দ প্রকাশ করেন বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়। তখন থেকেই সন্ত্রাসীদের ক্ষোভ দানা বাঁধে চেয়ারম্যান সেন্টুর ওপর। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে ওই বাহিনীর সদস্যরা ফের সংগঠিত হয়ে চেয়ারম্যান সেন্টুকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এছাড়াও স্থানীয় কথিত বিএনপি নেতা লালচাঁদের ভাগ্নে হিসেবে পরিচিত তরিকুল ইসলাম টুকুর সঙ্গেও চেয়ারম্যান সেন্টুর বিরোধ ছিল। সেন্টু বংশগতভাবে এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষমতার পালাবদলের পরও টুকু খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না। তাই পথের কাঁটা সরাতে টুকু চেয়ারম্যান সেন্টুকে হত্যার পরিকল্পনা করে বলে নিহত চেয়ারম্যানের স্বজন ও এলাকার লোকজন জানায়। চেয়ারম্যান হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তরিকুল ইসলাম টুকর বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ঠিক পেছনে। টুকু ফিলিপনগর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি নিজের পরিচয় দিতেন বলে স্থানীয়রা জানান। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই টুকু এলাকার কিছু কিশোর ও উঠতি যুবকদের নিয়ে চল্লিশা বাহিনী নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেন। র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত লালচাঁদ বাহিনী প্রধান লালচাঁদের ছেলে রুবেল এই বাহিনী ও গ্রুপের অন্যতম প্রধান সদস্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা

Share the post

Share the postকুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে দূর্গাপূজার বিসর্জনে কিছু সময় আনন্দ উৎসবে মেতেছিল দুই বাংলার মানুষ। বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের উপস্থিতিতে মাথাভাঙ্গা নদীর দুইপাড়ে বসেছিল এ মিলন মেলা। বিজয়া আনন্দে তারা আত্মীয়তার বন্ধনও করেছে অটুট। ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শিকারপুর সীমান্ত আর এপারে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ সীমান্ত। মাঝখানের সরু মাথাভাঙ্গা […]

কুষ্টিয়া শহরে আগুন নেভানোর জন্য নেই পানির ব্যবস্থা

Share the post

Share the postকুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার শহরে বেবী শফে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের এন এস রোড সংলগ্ন এ ঘটনা ঘটে। তবে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জানে আলম। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, বেবী শফের দোকান বন্ধ করে বাড়ীতে যাওয়ার প্রস্তুতি […]