অটোচালক থেকে মেয়র
সিনেমার কাহিনিকেও হার মানাবে তামিলনাড়ুর থাঞ্জাভুর জেলার কুম্বাকোনাম পৌরসভার অটোচালক থেকে সদ্য মেয়র হওয়া কে সরবাননের (৪২) জীবনকাহিনি।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, কে সারাভানন একজন অটোচালক এবং কংগ্রেসের শহর সভাপতি। সম্প্রতি পৌরসভায় মেয়র পদে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেন। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও অতীতকে ভোলেননি৷ শনিবার (১৯ মার্চ) শপথ নিতে এসেছিলেন এই অটোচালক৷খুব অল্প বয়সে বাবা-মা’কে হারান সরবানন৷ এর পর দাদুর কাছেই মানুষ হন৷ দশম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি৷ জীবন ধারণের তাগিদে পথে নামেন রোজগারের আশায়৷
বর্তমানে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তামিলনাড়ুর থুক্কামপালায়মে একটি ভাড়া বড়িতে থাকেন সরবানন। পাঁচজনের ছোট সংসার বেশ সুখেই কাটছিল তার৷ কিন্তু সেই সুখে কাঁটা বিঁধে করোনা৷ সংক্রমণের দাপটে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় উপার্জন৷ দিনে ২০০ টাকা রোজগার করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয় তাকে৷ চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে অবশ্য প্রতিবেশীদের পাশে পেয়েছিলেন সরবানন৷ প্রতিবেশীরা যথাযথ সাহায্য করেছিলেন তাকে৷ দিনে আনা দিনে খাওয়া সেই সরবাননই একদিন কুম্বাকোনাম শহরের মেয়রের হবেন তা কেউ ভাবতেও পারেননি।
সম্প্রতি কুম্বাকোনম শহরকে নতুন পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করে তামিলনাড়ু সরকার৷ এরপরেই ভারতের অন্যতম এই মন্দির শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হন কে সরবানন। ২ হাজার ১০০ ভোটের মধ্যে ৯৬৪ ভোট পেয়ে জয়যুক্ত হন তিনি৷ ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু জিতবেন এমনটা ভাবতে পারেননি৷ হেভিওয়েট প্রার্থীদের হারিয়ে জয় আসে তার ঝুলিতে৷ এরপর যখন তাকে মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে বেছে নেওয়া হয়, তখন তিনি দলের নেতৃত্বকে বলেন, তিনি একজন অটোচালক৷ মেয়র হওয়ার যোগ্যতা তার নেই। কিন্তু দলীয় নেতৃত্বের চোখে তিনিই সঠিক মানুষ এবং এই পদের যোগ্য প্রার্থী৷
শপথ গ্রহণের দিন অটো চালিয়েই আসেন সরবানন৷ শপথ নেওয়ার পর নতুন মেয়র জানান, তার প্রধান লক্ষ্য হবে শহরে ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থার কাজ সম্পূর্ণ করা। পাশাপাশি রাস্তা মেরামত, বিশুদ্ধ পানীয় জল ও রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর বন্দোবস্ত করা৷ মানুষের সেবাই হবে তার প্রধান লক্ষ্য৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে- এই খবর অত্যন্ত ইতিবাচক। দক্ষিণ ভারতে এভাবেই ক্রমশ গণতন্ত্র চর্চা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের শাসন কাজে অংশগ্রহণ ঘটলে গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত হবে।