

জলিলুর রহমান জনি,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের আদিবাসীদের জীবনযাত্রার একটি গভীর চিত্র উঠে এসেছে। তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৬০ হাজার আদিবাসী বসবাস করে, যেখানে মোট ১০৩টি গ্রামের মধ্যে ১৪টি গোত্রের আদিবাসীদের বসতি রয়েছে।
এই আদিবাসীরা মূলত উরাঁও, মাহাতো, সাঁওতাল, বসাক, মুরারী, তুরী, সিং, রবীদাস, রায়, মাহালি প্রভৃতি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। তাদের অনেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য মাঠে-ঘাটে শ্রম বিক্রি করে এবং বেশিরভাগ পরিবারই ঝাপরি বা পলিথিনের তৈরি ঘরে বসবাস করে।
আদিবাসীদের ভূমিহীন হয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে জমি দখল ও আইনি জটিলতা। তাড়াশ-রায়গঞ্জে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে প্রায় ২০০টিরও বেশি মামলা বিচারাধীন। আদিবাসীরা জমি হারিয়ে ক্রমশ ভূমিহীন হয়ে পড়ছে এবং দরিদ্রতার কারণে প্রায় ৫০০ পরিবার খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে।
আদিবাসীদের ধারণা, দরিদ্রতা ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার কারণে তাদের ধর্মান্তরিত হতে হচ্ছে।
তাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলি মিশ্র রূপ ধারণ করেছে। কারাম উৎসব, ডাল পূজা, সোহরাই সহ বেশ কিছু আদিবাসী উৎসব পালন করা হলেও, অনেক অনুষ্ঠান বিলুপ্তির পথে। আদিবাসী নারী-পুরুষ উভয়েই কৃষিকাজ, পশুপালন, তাঁতের কাজ এবং কুটির শিল্পে যুক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে তাদের প্রায় ৯০% এখন ভূমিহীন।
এনজিও সংস্থাগুলি আদিবাসীদের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও তাদের সংস্কৃতি, মাতৃভাষা এবং মানবাধিকার রক্ষায় তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়লেও, সমাজের শোষক শ্রেণির অত্যাচার-নির্যাতনে তারা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে।
গুল্টা বাজারের আদিবাসী পার্বতী উরাঁও, শিল্পী রানী ও নির্মলা রানী উরাঁও জানান যে, তারা সারাদিন কাজ করে মাত্র ১৫০-২০০ টাকা মজুরি পান।
অর্থনৈতিক দুর্দশার ফলে অনেক পরিবার এনজিও ঋণের ফাঁদে পড়েছে। প্রায় ৪ হাজার পরিবার ঋণগ্রস্ত। এমনকি অনেকেই খাসজমিতে বা অস্থায়ীভাবে বসবাস করে। যৌতুকের প্রভাবও তাদের জীবনকে বিপদগ্রস্ত করে তুলছে। আদিবাসীদের শোষণ, নিপীড়ন এবং তাদের সাংস্কৃতিক বিলুপ্তি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।