বারবার রদবদলে ববি প্রশাসন : কতটা মসৃণ হবে অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পথ?

Share the post
ববি প্রতিনিধি : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও উপাচার্যের পদে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ২০১১ সালে উচ্চশিক্ষার প্রসার ও গবেষণার অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত ৬ জন পূর্ণকালীন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন ও রুটিন দায়িত্ব পালন করেছেন আরও ২ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। তিনি এবং তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন। তবে অন্য কেউই পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। নানা প্রশাসনিক জটিলতা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
তবে এ বিতর্কের শুরু হয় দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড.এস এম ইমামুল হকের দায়িত্ব পালনের সময়।শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলায় একদল শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। পরে এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হন। যদিও এই আন্দোলনের পেছনে ছিল রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা, যা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সূচনা করে। এই আন্দোলন পরে নানা দাবি-দাওয়ায় রূপ নেয়।
তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন দায়িত্ব নেয়ার পর আন্দোলন বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক ব্যর্থতা লক্ষণীয় ছিল। পূর্ববর্তী আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের করা অধিকাংশ দাবির বাস্তবায়ন না হওয়া, অবকাঠামোগত অগ্রগতি না থাকা, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে, যা পরবর্তীতে নতুন আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করে।
রুটিন দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন। তিনি অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেন। এতে তাঁকে পূর্ণকালীন উপাচার্য করা হলেও ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পর ২০ আগস্ট একদল শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। যদিও একটি অংশ তাঁর পক্ষে অবস্থান নেয়, তবুও তিনি দায়িত্ব ছাড়েন
পরবর্তীতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. শুচিতা শারমিন। তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষার্থীরা ২২ দফা দাবির প্রেক্ষিতে ১ মাসের আল্টিমেটাম দেয়। সময়সীমা পেরিয়ে গেলে দাবি পূরণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে একদল শিক্ষার্থী তাঁর পদত্যাগ দাবি করে। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নেয়, ফলে তখন তিনি দায়িত্বে বহাল থাকেন।
তবে ১৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন অভিযোগে উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙে সিন্ডিকেট সভা পণ্ড করে একদল শিক্ষার্থী। এই সময়েও তাঁর পদত্যাগ দাবি করা হয়, কিন্তু ছাত্রনেতাদের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর,সে যাত্রায়ও তিনি তার পদ আঁকড়ে থাকেন।
এরপর ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দিনকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। উপাচার্যের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এ আন্দোলনকে আরও জোরালো করে। এর জেরে তৃতীয়বারের মতো উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ ১১ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসলে ১৩ মার্চ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে অপসারণ করা হয়। এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, মূল সমস্যা শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, “আমাদের আন্দোলনের সূচনা হয় শিক্ষকদের দ্বারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দুটি কোরাম রয়েছে। এক পক্ষ সুবিধা পেলে অন্য পক্ষ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। যতদিন শিক্ষকদের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শেষ না হবে, ততদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অস্থিরতা চলতেই থাকবে।”
যদিও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, বাস্তবতা ভিন্ন। ক্যাম্পাসে এখনও রাজনীতির প্রভাব দৃশ্যমান। উপাচার্য পরিবর্তন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলন, আন্দোলনে শিক্ষকদের সমর্থন ও অবস্থান, রাজনৈতিক প্রোগ্রাম—সবকিছুতেই রাজনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট।
বারবার রদবদল, আন্দোলন, এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার ফলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনিশ্চিত বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো—নতুন অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমের পথ কতটা মসৃণ হবে? বিশ্ববিদ্যালয় কি অবশেষে একটি স্থিতিশীল প্রশাসনিক কাঠামোর পথে এগোবে?নতুন পরিবেশে শিক্ষার্থীদের দেওয়া দফা গুলো ইতিবাচক মন্তব্য করে অন্তবর্তী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের দেওয়া দাবিগুলো খুব‌ই যৌক্তিক এর ভিতরে কিছু দাবি পূরণ করা হয়ে গেছে কিছু আছে স্বল্পমেয়াদি আর একাডেমিক বিল্ডিং এর বিষয় গুলো দীর্ঘমেয়াদি কাজ।তবে শিক্ষার্থীরা আমাকে নির্দিষ্ট করে সময় দেয়নি।
উপাচার্য হিসেবে আমাকে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে পক্ষ বিপক্ষ দেখলে চলবে না সম্মিলিতভাবে সবাইকে নিয়ে চলতে হবে, শিক্ষকদের দুই পক্ষের দ্বারা সৃষ্ট হয়ে আন্দোলন সম্পর্কে বলেন।
প্রশাসনের পরিবর্তন হলে অবশ্যই সমস্যা হয় সেই দিকটা বিবেচনায় নিয়ে আমি কোনো ধরনের পরিবর্তন করিনি তাদেরকে চালিয়ে যেতে বলেছি। অনেকেই পদত্যাগ পত্র দিয়েছিল তবে তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ হয়নি আমি তাদেরকে অনুরোধ করেছি চালিয়ে যেতে।তবে রেজিস্ট্রার যে পরিবর্তন হয়েছে এটাকে ঠিক পরিবর্তন বলা যাবে না তার এর আগেও রেজিস্ট্রার পদে অভিজ্ঞতা রয়েছে।তাই এটাকে ঠিক পরিবর্তন বলা যাবে না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ইবি’র লালন শাহ হল পরিদর্শনে উপাচার্য

Share the post

Share the postইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের সার্বিক অবস্থা ও খোঁজখবর নিতে সশরীরে হল পরিদর্শন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বুধবার (১৩ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি হল পরিদর্শনে আসেন। এ সময় হলের লাইব্রেরীর জন্য নিজ অর্থায়নে ৫ হাজার টাকা প্রদান করেন তিনি। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর […]

ইবিতে পূবালী ব্যাংকের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

Share the post

Share the postইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মুগ্ধ সরোবর এলাকায় পূবালী ব্যাংক পিএলসি কুষ্টিয়া শাখার উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূবালী ব্যাংক পিএলসি’র ফরিদপুর অঞ্চলপ্রধান ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ জহিরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া শাখার […]