দুলাল সরকারের সন্ধ্যার হলেই আলোর জন্য একমাত্র ভরসা পুরোনো দিনের সেই কুপি বাতি

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা: নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলায় রাতের বেলায় আশপাশের সকল বাড়িতে বিদ্যুতের আলো জললেও দুলাল সরকারের বাড়ি যেন অমাবস্যার অন্ধকার। সন্ধ্যার হলেই আলোর জন্য একমাত্র ভরসা পুরোনো দিনের সেই কুপি বাতি,পৌর শহরের ভেতরে তার বাড়ি হলেও বিদ্যুৎবঞ্চিত তিনি। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর পৌরসভার সাধুপাড়া এলাকার বাসিন্দা ৭৫ বছর বয়সী দুলাল চন্দ্র সরকারের বাড়িতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। পেশায় তিনি একজন দর্জি, দুলাল চন্দ্র সরকারের অভিযোগ, প্রতিবেশী বাধা দেওয়ায় তিনি পাচ্ছেন না বিদ্যুৎ। কবে জ্বলবে তার ঘরে বিদ্যুতের আলো তাও জানা নেই তার। তবে মৃত্যুর আগে নিজ ঘরে বিদ্যুতের আলো দেখে যেতে চান তিনি।
জানা গেছে, এই দুলাল সরকার ২০২০ সালের বিদ্যুৎ এর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে আবেদন করেন পরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য আসলে প্রতিবেশীর বাধায় চলে যেতে হয় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন। প্রতিবেশীর বাধা নিরসনের জন্য ২০২১ সালের ৯ আগস্টে দুর্গাপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের নিকট আরেকটি একটি আবেদন করেন দুলাল। দ্বিতীয়বার আবেদনের পর পুনরায় সংযোগ দিতে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন তার বাড়িতে আসলে এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তাই বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়েই আবারও চলে যেতে হয় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনকে। এমতাবস্থায় নিরুপায় হয়ে ২০২১ সালের ২২ আগস্ট একটি খুঁটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেতে আবেদন করেন দুলাল। এরপরও বিদ্যুৎ না পেয়ে তিনি খুঁটির আগের আবেদনটির দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফের লিখিতভাবে জানান। তখন আবেদনটি বাতিল হয়। এভাবে সাড়ে ৩ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের আলোর মুখ দেখেতে পারেননি দুলাল। দুলাল চন্দ্র সরকার জানান, স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে অভাব-অনটনের সংসার ছিল তাঁর। মেয়ে রোড লাইটের আলোতে পড়াশুনা করে এম এ পাশ করেছে। চার বছর আগে তিনি মেয়েকে বিয়ে দেন। দর্জির কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁকে। দীর্ঘদিনের উপার্জনের টাকায় ছোট একটা ঘর করে অসুস্থ স্ত্রী নিয়েই সেখানে বসবাস করেন তিনি। তাও আবার তার এই ঘরে নেই বিদ্যুৎ সুবিধা। জীবনের ৭৫ বছর কাটিয়েছেন বিদ্যুৎ বিহীন কিন্তুু শেষ সময়ে এসে কেবল নিজের ঘরে বিদ্যুৎ পাওয়ার প্রবল আশায় কাটছে দিন। দুলাল সরকার বলেন, সবার ঘরে বাতি জ্বললেও আমার ঘর অন্ধকার। আমি কয়েকবার আবেদন করেছি। বার বার অফিসে গেছি। অনেক জায়গায় ঘুরেও বিদ্যুৎ পাইতেছি না। আমার অনুরোধ মৃত্যুর আগে যেন ঘরে বিদ্যুতের আলো দেখে যেতে পারি।
বাধার বিষয়টি জানতে চাইলে প্রতিবেশী রিপন সরকারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বাড়ির ওপর দিয়ে দুলাল বিদ্যুতের তাঁর নিতে চাচ্ছে। ভবিষ্যতে তিনি বাড়ি করবেন তখন সমস্যা হবে। বাড়িঘরের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার নেওয়ার নিয়ম নেই বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে দুর্গাপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ওই বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৩-৪ বার লোক পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানকার লোকজনের বাধার মুখে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। যেহেতু তিনি একটি খুঁটির নির্দিষ্ট সীমানার ভেতরে আছেন তাই সেখানে আরেকটি খুঁটি দেওয়া যায় না। তাই বাধা দূর করতে পারলেই আমরা সংযোগ দিতে পারবো। এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম. রকিবুল হাসান বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তার বাড়িতে বিদ্যুতের আলোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নেত্রকোনায় গুলিতে একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান হারিয়ে অকুল পাথারে রাসেলের পরিবার

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : গুলিতে নিহত রাসেল মিয়া। গাজীপুরের মাওনায় মোরগের গাড়িতে হেলপারের কাজ করতেন রাসেল মিয়া (১৯)। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য কিশোর বয়স থেকেই এ কাজে যোগ দিয়েছিলেন। গত ৫ আগস্ট বিকেলে মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের পোশাক পরা ভারতীয়দের আটক করে জনতা। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ভগ্নীপতির […]

নেত্রকোনায় বিদ্যালয়ের কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা ৫০ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোণা : নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার বরইতলা এন আই খান উচ্চ বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হলেও প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি।২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে উন্নয়ন সংশোধিত বাজেটে ‘ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা’ খাতের আওতায় ইউনিয়নের অনগ্রসরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং […]