কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আত্মসাৎ আড়াল করতে থানায় জিডি: চকরিয়ায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধিঃ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্তের বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ কার্যক্রের সম্মানী ভাতা আত্মসাৎ ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলায় কর্মরত পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও পরিবার কল্যাণ সহকারীদের পক্ষ থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারী এমন অভিযোগ এনে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও দূর্ণীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলায় কর্মরত পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও পরিবার কল্যাণ সহকারীদের নামে থানায় সাধারণ ডায়েরির আবেদন করেছেন ডাঃ শোভন দত্ত।মঙ্গলবার দুপুরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে চকরিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা মাঠ কর্মী সমিতির সভাপতি আজিজুল মন্নান জানান, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোভিড-১৯ এর দায়িত্ব পালনকারী পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও পরিবার কল্যাণ সহকারীদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন ডাঃ শোভন দত্ত। ইতোমধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা তহবিল ইউনিসেফ ও ব্র্যাক এর পক্ষ থেকে প্রতিজনের জন্য ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী ভাতা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য সহকারীদেরকে উক্ত টাকা প্রদান করা হলেও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কোন কর্মচারীদের কে কোন ধরনের টাকা প্রদান করা হয়নি।
কিন্ত তিনি (ডাঃ শোভন দত্ত) আমাদের সম্মানী ভাতা না দিয়ে উল্টো গালিগালাজ ও অসম্মানী করেন।
কোভিড-১৯ এর জন্য প্রশিক্ষণের কথা থাকলেও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক- পরিবার কল্যাণ সহকারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান না করে উক্ত টাকা আত্বসাৎ করেন তিনি।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আবদুল মজিদ জানান, কোভিড-১৯ এ দায়িত্ব পালনের ভাতার টাকার জন্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বিধান রুদ্রসহ কয়েকবার ওনার অফিসে যাই, প্রতিবারেই ওনি আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনজিও কর্তৃক নিয়োজিত নার্সদের সাথে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার উঠে আসছে বলে জানান তিনি।
বদরখালীতে দায়িত্ব পালন করা এমএইচভি শেখ মুজিবুর রহমান জানান, চকরিয়ায় ৪৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত মাল্টিপারপাস হেল্থ ভলান্টিয়ারদের (এমএইচভি) ভাতা প্রদানের সময় অফিস খরচ বলে প্রতিবারেই টাকা আত্মসাৎ করেন সহ এমন কোন গর্হিত কাজ নেই তিনি করেন না।
ভুক্তভোগী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের একাধিক কর্মচারী বলেন, ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে এনজিও কর্মীদের নিয়োগের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও হাসপাতালের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন ডাঃ শোভন দত্ত। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক কর্মচারী ডাঃ শোভন দত্তের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ করা হলেও উপর মহলের সাথে আঁতাত করে প্রতিবারেই পার পেয়ে যায় বলে জানান।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শোভন দত্ত টাকা আত্মসাৎ এর বিষয় সঠিক নয় উল্লেখ করে বলেন, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক আবদুল মজিদ তার অপকর্ম ডাকার জন্য আমার বিরুদ্ধে এগুলো করছে। আমার পিতাকে তুলে গালিগালাজের একটা বয়েজ রেকর্ডের ভিত্তি করে তিনি জিডি করেছেন বলে জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বিশ্বব্যাপী মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের লোকজন সাহসীকতার সাথে রোগীদের সেবা কাজ পরিচালনা করেছে। তাদের সাথে যদি কেউ অনিয়ম করে থাকে, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।