স্বামীর মৃত্যুর পর দুই সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন লাভলী খাতুনের-ঘর নেই, কাজ নেই—একবেলা পান্তা ভাতেই কাটছে মা-সন্তানের দিন

Share the post
 জলিলুর রহমান জনি , সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সন্ধ্যা নামলেই গ্রামের পথগুলো যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন পাচঠাকুরী গ্রামের এক কোণে চুপচাপ বসে থাকেন এক নারী—লাভলী খাতুন। চোখেমুখে ক্লান্তি, তবু বুকভরা আশা। তাঁর হাতে একটিমাত্র থালা—যেখানে আছে কিছু পান্তা ভাত। এটাই আজ রাতের খাবার, তাঁর ও তাঁর দুই সন্তানের।
একসময় স্বামী-সন্তান নিয়ে ছোট্ট একটি সুখের সংসার ছিল লাভলীর। স্বামী দিনমজুর ছিলেন; সামান্য উপার্জনেই কোনো রকমে চলত সংসার। কিন্তু কয়েক বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর সেই সংসার ভেঙে পড়ে একেবারে। তখন থেকে শুরু হয় তার দুঃসহ জীবনসংগ্রাম।
লাভলীর কোনো জমি নেই, নেই নিজের ঘরও। অন্যের জায়গায় অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। কাজ না থাকলে দিন কাটে না, আর খাওয়া তো দূরের কথা—বাচ্চাদের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতেও হিমশিম খেতে হয় এই মায়ের।
লাভলীর ঘরে এখন চুলা জ্বলে না নিয়মিত। কখনো পাড়া-প্রতিবেশীরা কিছু দেয়, তাতেই দিন চলে। কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে বেঁচে থাকা এখন তার জীবনের বাস্তবতা।
“অনেক সময় সারাদিন কিছুই খাওয়া হয় না। রাতে বাচ্চারা না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তখন বুকটা ভেঙে যায়,”—কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন লাভলী খাতুন।
তিনি আরও বলেন, “আমার থাকার মতো একটা ঘর বানিয়ে দিলে, আর দুই মুঠো ভাত জোগাড় করার মতো একটা কাজ দিলে বাচ্চাদের নিয়ে বাঁচতে পারি।”
পাচঠাকুরী গ্রামের প্রতিবেশীরা বলেন, “লাভলী খুব কষ্টে আছে। কোনো দিন খায়, কোনো দিন খায় না। ওর ছেলেমেয়েগুলোর ভবিষ্যৎ কী হবে জানি না। সরকার যদি একটা ঘর আর কাজের সুযোগ দিত, তাহলে অন্তত ওদের মুখে হাসি ফিরত।”
এক প্রতিবেশী বৃদ্ধা জানান, “আমরা মাঝেমধ্যে একটু চাল বা শাকসবজি দিয়ে সাহায্য করি, কিন্তু আমাদেরও সামর্থ্য সীমিত। লাভলীর অবস্থা দেখে কাঁদতে হয়।”
সকালে লাভলী খাতুন ঘর থেকে বের হন কাজের খোঁজে। কেউ ডাকলে ঘর পরিষ্কার করেন, কেউ দিলে মাঠে কাজ করেন। কিন্তু এখন কাজও মেলে না সহজে। বৃষ্টির মৌসুমে বা শীতে তো প্রায় কাজই থাকে না। তখন দিন কাটে অর্ধাহারে অনাহারে।
তার ছোট ছেলে ক্লাস টু-তে পড়ে, মেয়েটি এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি। অভাবের তাড়নায় মাঝে মাঝে সন্তানদের স্কুলে পাঠানোও সম্ভব হয় না। “ওদের মুখে একদিনের ভালো খাবার তুলে দিতে পারলেই আমার মনে শান্তি পাই,” বলেন তিনি।
লাভলী খাতুন সরকারের প্রতি আকুতি জানিয়ে বলেন,
“আমি কোনো ভিক্ষা চাই না। শুধু একটা থাকার ঘর আর ছোটখাটো কাজ চাই—যাতে আমার বাচ্চাদের নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি। আল্লাহ যেন দয়া করেন।”
একজন মা যখন সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারে না, তখন সমাজের বিবেক কাঁদে। লাভলী খাতুনের গল্প কোনো একক নারীর নয়; এটি আমাদের চারপাশের অসংখ্য নিঃস্ব মানুষের গল্প।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। একটি ঘর, একটি কাজ—এমন ছোট্ট উদ্যোগই হয়তো পাল্টে দিতে পারে লাভলীর ভাগ্য, ফিরিয়ে দিতে পারে তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

রামগতিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই বাড়ির দুপক্ষের মারামারি, আহত-১০

Share the post

Share the postকবির হোসেন রাকিব,রামগতি(লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে রামগতিতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই বাড়ীর দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ৮জন আহত হয়েছে।গতকাল সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সবুজগ্রাম ৬নং ওয়ার্ডের মিজি কলোনী সংলগ্ন মিজি বাড়ীতে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের লোকজন রামগতি থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। স্থানীয়রা জানায়, ওহাব […]

সোনারগাঁ নৌ পুলিশের সাথে মেঘনা নদীতে চাঁদাবাজদের সাথে সংঘর্ষ পুলিশ সহ আহত ৫

Share the post

Share the postফাহাদ, সোনারগাঁ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদীতে চাঁদাবাজি ঠেকাতে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে চাঁদাবাজ চক্রের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা নদীর নুনেরটেক এলাকায়।প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে […]