প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও ববি’তে হয়নি কোনো সমাবর্তন

Share the post
আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : স্নাতক সম্পন্ন করার পর কালো গাউন পরে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠার দিন সমাবর্তন৷ দিনটি শিক্ষার্থীদের জীবনের এক বিশেষ স্মৃতির। এই দিনেই তারা আনুষ্ঠানিকভাবে মূল সনদ গ্রহণ করে থাকেন। তবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) এমন আনন্দঘন মুহূর্ত কেবল স্বপ্নই রয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো সমাবর্তনের আয়োজন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টি ব্যাচের আবর্তন হয়েছে এখন পর্যন্ত। এরমধ্যে ৮টি ব্যাচের শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে বের হলেও, কেউই সমাবর্তনের দেখা পাননি। ফলে প্রতিবছরই বাড়ছে সমাবর্তন বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। অনেকের কাছে সমাবর্তন যেন “সোনার হরিণে” পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া গত বছর সমাবর্তনের প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রপতি সেই সমাবর্তনে থাকার আগ্রহও প্রকাশ করেন। কিন্তু এরপর আর কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সমাবর্তন না হওয়ায় মূল সনদ না পেয়ে সাময়িক সনদ নিয়েই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদের। এতে চাকরি বা বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নানা রকম জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছে অনেককে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয় নিয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও পরিকল্পনাহীনতার কারণেই এতদিনেও সমাবর্তনের আয়োজন সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুহাম্মদ খাজা আহমেদ বলেন, স্নাতক সম্পন্ন করেছি কয়েক বছর আগে, কিন্তু এখনো সমাবর্তন হয়নি—এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সমাবর্তন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের পরিশ্রম ও স্বপ্ন পূরণের প্রতীক। এই সমাবর্তনের অনুপস্থিতি আমাদের মধ্যে একধরনের অপূর্ণতা তৈরি করেছে। তাছাড়া, মূল সনদ না পাওয়ায় অনেক সময় চাকরি বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হয়, যেখানে প্রোভিশনাল সনদ যথেষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার আন্তরিক অনুরোধ, অনতিবিলম্বে সমাবর্তন আয়োজনের জন্য একটি সুস্পষ্ট সময়সীমা ও পরিকল্পনা ঘোষণা করা হোক। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে একটি গৌরবোজ্জ্বল সমাবর্তন আয়োজন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।”
লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মিল্লাত হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য স্মৃতিকে স্বযত্নে ধরে রাখতে কাঙ্ক্ষিত একটি মূহুর্ত হলো সমাবর্তন। এটা শুধু সনদপ্রাপ্তির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নয়। বরং কালো গাউন, চারকোণা টুপি গর্ব আর অনুপ্রেরণার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষাজীবনে সমাবর্তনের অভিপ্রায় থেকে পুনরায় মিলিত হোক প্রাণে প্রাণে।”
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে নবনিযুক্ত উপাচার্য বরাবর শিক্ষার্থীদের পেশ করা ৮২টি দাবির মধ্যে চলতি বছরেই সমাবর্তন আয়োজনের দাবিও জানানো হয়৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, “চার বছর পড়াশোনার শেষে সকল শিক্ষার্থীরই সমাবর্তনের আশা থাকে।  আমি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

অসচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে ইবি’র ছাত্রদল নেতা

Share the post

Share the postইবি প্রতিনিধি: নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ মেলে অনেকেরই, কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া হয়ে ওঠে না সবার। তেমনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় পড়েছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন ইবি শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ। টাকার অভাবে […]

সিরাজগঞ্জ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ

Share the post

Share the postজলিলুর রহমান জনি,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রেলপথ অবরোধ করেছে।বুধবার, ১৩ আগস্ট, সকালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেছে। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে রেললাইনে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে নিজেদের দাবির পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা […]