

মাহমুদুল হাসান, স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম বিভাগঃব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের চান্দের বাড়ির গোষ্ঠী ও ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর লোকদের মধ্যে সংঘর্ষে মিয়াজুল হোসেন-(৫০) নামের এক ব্যক্তির নিহতের ঘটনায় নাটাই গ্রাম এখন পুরুষ শুন্য।
বুধবার বিকেলে মাদক সেবনে বাঁধা দেয়াকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মিয়াজুল হোসেন প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে মারা যান।
নিহত মিয়াজুল নাটাই গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে। তিনি সদর উপজেলা থেকে আশুগঞ্জের লালপুর পর্যন্ত সড়কে চলাচলকারী সিএনজি (অটোরিকশা) পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি চান্দের বাড়ির গোষ্ঠীর লোক।
মিয়াজুল হোসেন মারা যাওয়া খবর গ্রামে এসে পৌছলে চান্দের বাড়ির গোষ্ঠীর লোকজন রাতেই ছলিমের বাড়ির গোষ্ঠীর ৪০/৫০ টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের তান্ডব চালায়। পরে তারা বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
এদিকে মিরাজুল হত্যা ঘটনায় থানায় মামলা হলে ছলিমের বাড়ির গোষ্ঠীর পুরুষরা গ্রাম থেকে পালিয়ে যায় এবং প্রতিপক্ষের হুমকি-ধামকির কারনে ভয় ও আতঙ্কে মহিলারা বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের চান্দের বাড়ির গোষ্ঠী ও ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে।
চান্দের বাড়ির গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মোবারক হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য তকদির হোসেন। ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার ও সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মিয়া ও স্থানীয় বিএনপির নেতা কামাল হোসেন।
ছলিম বাড়ির লোকজন জানান, গ্রেপ্তারের ভয়-আতঙ্কে ছলিম বাড়ির পুরুষ লোকজন ও প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে মহিলাসহ শিশুরা বাড়িঘরে থাকতে পারেছে না। অধিকাংশ বাড়ি-ঘরে তালা ঝুলছে। বসতঘরে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ায় পোড়া আসবাবসহ লেপ-তোষক থেকে এখনো ধোয়া বের হচ্ছে। প্রতিপক্ষের লোকেরা ছলিম বাড়ির লোকজনের ৩০ টি গরু এবং ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছেন।
ছলিম বাড়ির নুরুন্নাহার বেগম বলেন, তারা পেট্রোল ঢেলে আমার বসতঘরে আগুন দিয়েছে।
নাটাই বটতলী গ্রামের রিয়া বেগম ও জান্নাত আক্তার বলেন, সন্তানদের নিয়ে পড়নে থাকা কাপড় নিয়ে কোনোমতে ঘর থেকে বের হয়ে প্রাণ রক্ষা করেছি। তানা হলে তারা জীবিত পুড়িয়ে ফেলতো। পুরো বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ছলিম বাড়ির আলী হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য সামসু মিয়া বলেন, আমাদের পক্ষের ৫০ টি বসতঘরে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে পুরুষরা গ্রাম ছাড়া এবং ভয়-আতঙ্কে শিশুসহ মহিলারা বাড়িতে থাকতে পারছে না। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে একশো কোটির টাকার ক্ষতি হয়েছে। মিয়াজুল হামলায় আহত হয়ে নয়, হার্ট এটাকে মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই তা প্রমান হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোজাফফর হোসেন বলেন, নিহতের ঘটনায় ১২৯ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৩৮ জনকে আসামী করে অপরপক্ষ মামলা দায়ের করেছেন। হত্যা মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে। হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৪৭ জনকে আসামী করে সলিম বাড়ির লোকজন একটি এজাহার দিয়েছেন।