লাখো ভক্তের পদচারণায় মুখরিত মান্দার ঐতিহাসিক জিউ মন্দির
মির্জা তুষার আহমেদ,নওগাঁ : প্রতি বছরের ন্যায় এবারও লাখো ভক্তের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ঐতিহাসিক শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউ মন্দির প্রাঙ্গণ। রবিবার (৬ এপ্রিল) ভারত সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী, পুর্ণ্যার্থীদের ঢল নেমেছে। হিন্দুমতে ভগবান শ্রী রামের জন্মোৎসবকে ঘিরে প্রায় ৪শ’ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ স্থান এটি। নারী-পুরুষ ভক্তের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মন্দিরের চারিপাশ। রাম নবমী উপলক্ষে চৈত্র মাসে রামের জন্ম তৃতীয়া শুক্লা তিথিতে রোববার মন্দিরে বিশেষ পূজা-অর্চনার আয়োজন করা হয়। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয় এ পুজা-অর্চনা। কীর্তন, প্রসাদ বিতরণ, ভক্তদের পুজো অর্চনা, ভোগ নিবেদন এবং মানত দেয়ার মধ্যদিয়ে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গন।
কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুলিশ সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে রেখেছে এবারেও। ঐতিহাসিক প্রত্বতত্ব নিদর্শনে সমৃদ্ধ উত্তরের নওগাঁ জেলার অন্যতম পূণ্যভূমি স্থাপত্যের মধ্যে মান্দা উপজেলার ঠাকুর মান্দা রঘুনাথ জিঁউ মন্দিরটি কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সতের শতকের অন্যতম স্থাপত্যের মধ্যে এটি একটি অন্যতম। চৈত্র মাসের নবমী তিথিতে রামনবমী উৎসব ১৫ দিন ধরে চলে। এখানে নানা ধর্মীয় উৎসব ও মেলা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এটি একটি অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে সারা ভারত উপ-মহাদেশে।এই উৎসবে বিশেষ করে রামনবমী উৎসবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ভক্তবৃন্দ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও ভক্তরা আসেন ঠাকুর দর্শনে ও তাঁদের মানত দিতে। হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভক্তের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে মন্দিরের চারিপাশে প্রায় ২ থেকে ৩ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে। শত শত বাস, মাইক্রোবাস, জীপ আর হাজার হাজার ভ্যান ও ভটভটিতে চড়ে ভক্তরা আসেন এই রঘুনাথ মন্দিরে।নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৪০কিঃ মিঃ পশ্চিমে মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের মান্দা গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরটি।
এক সময় এই মন্দিরের চারি ধারে বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে ছিল শুধু বিল। মন্দিরের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শিব নদী। একসময় এই নদীর ছিল পূর্ণ যৌবন । এই নদীতে ভক্ত দর্শনার্থীরা গঙ্গা স্নান করে ভেজা কাপড়ে পাশের বিল থেকে পদ্মের পাতা তুলে মাথায় দিয়ে মন্দিরে যেত ঠাকুর দর্শনে। এখনো কিছুটা হলেও ভক্তরা সেই রীতি-নীতি মেনে চলার চেষ্টা করেন। নদী এবং বিলে পানি না থাকলেও ভক্তরা মন্দির সংলগ্ন পুকুরে স্নান করে ভেজা কাপড়ে কেউ কেউ আবার দুর্লভ পদ্মপাতা সংগ্রহ করে তা মাথায় দিয়ে তার ওপর মাটির পাতিল বোঝাই ভোগের মিষ্টান্ন মাথায় নিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরে প্রভুর চরনে নিবেদন করে থাকেন। কেউ কেউ এক সপ্তাহ ধরে মন্দিরের পার্শ্ববর্তী মাঠেই আস্তানা গাড়ে। সেখানেই রান্না করে খেয়ে তারা সেখানেই অবস্থান করে। ভক্ত বৃন্দদের ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে কমিটির লোকজন সেখানে পদাবলী কীর্তনের ব্যবস্থা করেছেন।