পরের দিনটা ছিল এক যুদ্ধের মতন: মেহজাবিন
বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী। সারাবছরই নতুন নতুন নাটকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। প্রতিটি নাটকে অভিনয়ের পরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন তিনি। মেহজাবিন ও নিশো অভিনীত নাটকগুলো বরাবরই প্রশংসিত হয়ে আসছে।
সম্প্রতি মেহজাবিন তার অভিনীত তিনটি নাটকের পেছনের গল্প সময় সংবাদের কাছে তুলে ধরেছেন।
১. শেষটা সুন্দর : ঈদ উল ফিতর এর জন্য সব ডেট লক চাঁদ রাত পর্যন্ত এবং এই নাটক টি করার জন্য আমাদের হাতে সময় মাত্র ৩ দিন। তার ওপর বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে ফণী নামের ঘূর্ণিঝড়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যত বড় তুফানই আসুক না কেনও আমরা শুটিং শেষ করবো। কারণ ঈদ এর আগে আবার ডেট মিলানো সম্ভব হবে না। কিন্তু যেটার ভয় ছিল সেটা ঘটেই গেল। শুটিং এর ২য় দিন ফেসে গেলাম বৃষ্টির কারণে। তাই তৃতীয় দিন আমরা অনেক ভোরে শুটিং শুরু করি এবং ফণী কে হার মানিয়ে কাজটা শেষ করি। নাটকটির একটি সংলাপ খুব ভালো লেগেছিলো ‘কাবিন হিসাবে আমি তোমাকেই চাই, যদি কখনও বিচ্ছেদের কথা আসেও কাবিন হিসাবে যেনো তোমাকেই পাই ।
২. টম এন্ড জেরি : প্রেম এবং বিচ্ছেদের বাইরে কিছু করার আশায় আমি বেছে নেই অন্যরকম একটি গল্প। যেটা দেখে মানুষ হাসবে এবং স্ট্রেস কমাবে। নাটক টি যেদিন শুট করার কথা সেদিন খুব ফুরফুরে মেজাজে বাসা থেকে রওনা দিলাম। কিন্তু কে জানত নাটকটি শুরু হবার আগেই বিপদে পরে যাবে। ওই দিন ভিআইপি মুভমেন্ট চলছিলো এবং আমাদের যেতে হবে ধানমন্ডি তে। ১১ টা, ১২ টা , দুপুর ১ টা !! মনে হচ্ছিল স্লো-মোশনে দুনিয়া চলছে সেদিন। কোনোমতে পৌঁছলাম স্পটে। গিয়ে শুনি ক্যামেরার মাইক্রো এখনও এসে পৌঁছাতে পারে নাই। এর পরের টা ইতিহাস। সেদিন আমরা সিক্যুয়েন্স করতে পেরেছিলাম সব মিলিয়ে ৪/৫ টা। পরের দিন ছিল এক যুদ্ধের মতন। সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কাজ করে তার আগের দিনের ফেলে যাওয়া ৬ টা সিকোয়েন্স করি আমরা। এন্ডিং সিকোয়ান্স শেষ করে গাড়িতে উঠে সময় চেক করে দেখি রাত সাড়ে ৩ টা বাজে।
৩. এই শহরে : এই নাটকের শুটিং এ যাওয়ার আগের দিন শুটিং শেষ হয় ভোর ৬ টায়। বাসায় গিয়ে কস্টিউম গোছাতে গোছাতে ৭ টায় বাসার নিচে গাড়ি হাজির। লাগেজ নিয়ে বের হয়ে গেলাম এবং মনে মনে দোয়া করলাম রাস্তায় প্রচুর জ্যাম থাকুক, তাহলে ডেমরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটু ঘুমাতে পারবো। তাই হলো। আড়াই ঘণ্টা ঘুমাতে পেরেছিলাম যানজটে আটকে। গিয়ে একটানা শুট করি রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত। পরের দিন নিশো ভাইয়া এবং আমি একসাথে কম্বাইন্ড সিন গুলো করে দেখা গেলো আরো ১৪ টা সিন প্লাস শট বাকি। কিন্তু ঈদ এর আগে আর তো ডেট ফ্রি নাই। সবাই পড়ে গেলাম বিপদে। সলিউশন বের করলাম। পরে আরেকদিন অন্য নাটকের শুটিং সারাদিন করে রাত ১০ টায় রওনা দেই পুরান ঢাকার দিকে। নিশো ভাইও অন্য সেট থেকে কাজ শেষ করে চলে আসেন। রাত ১২টা থেকে সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত আমরা কাজ করে, নাটকটি শেষ করি। আরও কিছু অংশ বাকি ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে দৌঁড়ে কখনোই পারা যায় না। এই কাজ শেষ করে ওইদিন সকাল ১০ টায় পুরান ঢাকাতেই আমরা নতুন করে ‘ইনায়াত’ নাটক এর কাজ শুরু করি।
সব কাজ এর পিছনেই অনেক গল্প আছে। কখনও বলা হয় না তাই আজ বললাম। তাই যখন কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনার প্রিয় কাজ কোনটি তারা একটা নাম বলতে পারে না। কারণ সবগুলোর পিছনেই লুকিয়ে থাকে কষ্ট, চেষ্টা এবং পরিশ্রম।