নেত্রকোনায় তীব্র যানজটের দুর্ভোগে শহরবাসী, অতিরিক্ত গাড়িতে নাজেহাল অবস্থা
সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা : নেত্রকোনা জেলা শহরের মোড়ে মোড়ে আবারো তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থেকে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। অনেক সময় পথচারীদের পায়ে হেঁটে চলারও উপায় থাকে না।জেলা শহরে চলাচল করে মাত্রাতিরিক্ত অটোরিকশা। লাইসেন্সবিহীন এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাসহ যত্রতত্র পার্কিং করে রাখে। তীব্র যানজটে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যানবাহনের যাত্রী, চালক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। শহরের প্রায় সব সড়কেই যানজট লেগে থাকার কারণে সময়মতো কেউই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও পড়ছেন যানজটে। আর সাধারণ নাগরিকরা যানজটে পড়ে হারাচ্ছেন মূল্যবান সময়। জানা যায়, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শহরে চলাচলের জন্য প্রায় ৮ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দিয়েছে। এর বাইরে প্রায় সমানসংখ্যক মিশুক আর ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। ফলে সবসময়ই শহরে যানজট লেগে থাকে। একরামপুর মোড়ে যানজট থাকলে শহরের পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। শহরের থানার মোড়, তেরী বাজার, আখড়ার মোড়, রাজুর বাজার, শহীদ মিনার মোড়, সদর হাসপাতাল, জজ কোর্ট এলাকায় সকাল ৯টার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত একটানা ভিড় লেগেই থাকে। এই সড়ক গুলোতে প্রতিদিন চলাচল করে ট্রাক, অটোভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন। এসব যানবাহনের জন্য পরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে রাস্তার একপাশ থেকে আরেকপাশে যেতে হলে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। এদিকে যানবাহনগুলো জেলা শহরে আসে প্রতিদিন সকালে। আবার জেলা শহর পেরিয়ে বহু যানবাহন নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে জেলার উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করে। বিপরীত দিকের বহু যানবাহন জেলার পূর্বাঞ্চলে যেতে হলেও শহরের বিভিন্ন মোড় ধরেই যেতে হয়। এই মোড় গুলো হয়েই যাতায়াত করতে হয় শহরের উত্তর-পূর্ব কোণের রেলস্টেশন,সহ উপজেলার অনেক এলাকায়। ফলে প্রতিটি রাস্তায় যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ও জংশনের চরিত্র ধারণ করে আছে।
এদিকে শহীদ মিনার মোড়ে যানজট হলে পুরো শহরই অচল হয়ে যায়। এ সড়কের দুর্ভোগ ঘোচাতে দেড় বছর আগে একটি বাইপাস সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। সম্প্রতি ফের শুরু হলেও এলাকাবাসী কাজে ধীরগতির অভিযোগ করেছেন। সওজ কর্মকর্তারা বলছেন, বাইপাস নির্মিত হলে শহরের প্রতিটি রাস্তায় যানজট কমে আসবে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে শহীদ মিনার মোড়ে দেখা গেছে, বৃহদাকার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ইটবোঝাই ট্রাক্টরসহ ছোট-বড় প্রচুর যানবাহন ইঞ্জিন বন্ধ করে যানজটে আটকে আছে। এতে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না কেউ। এদিকে ভারী যানবাহন শহরে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যেন এর বাইরে কেউ নেই। ভারী যানবাহন শহরের দক্ষিণাংশের চলে আসে। তখনই তৈরি হয় তীব্র যানজট। এ কারণে অনেক যাত্রীই ট্রেন ধরতে পারেন না। ট্রেনে ওঠার জন্য বাধ্য হয়ে অনেকেই মাঝপথে নেমে লাগেজ-ব্যাগ মাথায় করে হেঁটে স্টেশনে যেতে বাধ্য হন। নাজমা আক্তার নামে এক নারী জানান, তার স্বামী অসুস্থ। হাসপাতালে যাবেন। তিনি বলেন, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তেরী বাজার মোড়ে যানজটে আটকে আছেন। এই শহরে মানুষ আসতে ভয় পায় যানজটের কারণে। ইচ্ছামতো গাড়ি পার্ক করে মালপত্র লোড-আনলোড করা হয়। সড়কের পাশজুড়ে লম্বা সারিতে শুধুই অটোরিকশা আর বড় বড় ট্রাক। জেলা শহরের স্থানীয় বাসিন্দা মেরাজ নাছিম জানান, এই শহরে মানুষের চাপ কমছে না। নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে শহরে চাপ বাড়িয়েছে সাধারণ মানুষ। শহরে মোটরসাইকেল, রিকশা, প্রাইভেটগাড়ি, অটো চার্জারের যানবাহনের উপস্থিতি আগের থেকে বেড়েছে কয়েকগুণ। অন্যদিকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে তিন চাকার যান।শহরে চলাচল করা পথিক শরিফুল ইসলাম জানান, কয়েকদিন ছাত্ররা ট্রাফিকিং ব্যবস্থায় ছিল। তখন এত যানবাহনও ছিল না, যানজটও ছিল না। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এত যানজট কীভাবে যে সৃষ্টি হলো, দ্রুত কোথাও যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। এতে শহরে আসা প্রায় ১০ হাজারের অধিক মানুষের প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, অবৈধ অটোরিকশার কারণে যানজট বাড়ছে। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে শহরের যানজট কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা নিলে এই সমস্যা সৃষ্টি হবে না বলে তিনি জানান।
অটোচালকরা জানান, যানজটের কারণে তাদের আয়ও কমে যাচ্ছে। যে গন্তব্যে আগে আধা ঘণ্টায় তিনবার যাতায়াত করতে পারতেন, সেখানে এখন একবার যেতেই আধা ঘণ্টা লেগে যায়। যানজটে আটকে পড়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, জেলা শহরের যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে শহরবাসী যানজটের দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। যানজটের কারণে কর্মস্থলমুখী অনেকেই এখন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও ব্যস্ততম সড়ক এড়িয়ে চলছেন। তাতেও সুফল মিলছে না; এখন অলিগলিতেও সর্বদাই জট বাঁধছে যানবাহনের।নেত্রকোনা ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানা যায়, যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে ইজিবাইকের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এবং অদক্ষ চালকের কারণে যানজট বৃদ্ধি পায়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকরা ইজিবাইক চালালে যানজট ও দুর্ঘটনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।