

সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোনা : মাচায় ঝুলছে লাউ।নেত্রকোনা জেলায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কোথাও জমিতে বীজ রোপণ করছেন। আবার কোথাও গাছে আসা সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই সবজি বিক্রি করে কৃষকরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলার ১০টি উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। চলতি বছরে জেলায় প্রায় ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে। গত বছর জেলায় প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছিল। এসব সবজি বিক্রি করে কৃষকরা ব্যাপক লাভ করেছিলেন। সে জন্য এ বছর শীত শুরুর অনেক আগেই ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটোল, শিম, টমেটো, বেগুন, লাউসহ শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শত শত বিঘাজুড়ে শীতের হরেক রকম সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। এর মধ্যে মুলা, বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, পটোল, শিম, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, গাঁজর, লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাকসহ শীতের সব রকমের শাকসবজি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সবজির দামও বেশি। ভালো দাম পাওয়ায় শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি। প্রকল্পভিত্তিকও চাষ হচ্ছে এসব সবজি।
কৃষকরা জানান, পুরো শীতেই বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে। তবে মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। এ কারণে তারা শীত শুরু হওয়ার আগেই শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। জেলার আটপাড়া উপজেলার কৃষক মফিজ মিয়া বলেন, ‘সবজি চাষের ফলে আমার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। আমি এখন স্বাবলম্বী। এখন আমাকে শাকসবজি বিক্রির জন্য হাটবাজারে যেতে হয় না। সবজি খেত থেকেই পাইকাররা ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে যান। দামও ভালো পাওয়া যায়। এ ইউনিয়নের প্রায় সব ধরনের শাকসবজি চাষ হয়। এখানকার শাকসবজিতে বিষ দেওয়া হয় না। এ গ্রামকে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির গ্রাম বলা হয়।
মোহনগঞ্জ উপজেলার কৃষক লতিফ মিয়া বলেন, ‘সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও অনেক কম। তবে যত্নে ত্রুটি করা যায় না। কম সময়েই সবজি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় প্রতিদিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়। পরিবারের চাহিদাও মেটানো সম্ভব। তা ছাড়া চলতি মৌসুমে সবজির দামও অনেক ভালো। সব মিলিয়ে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছি। জেলার সদর উপজেলার কৃষক উন্নছ আলী বলেন, ‘আমি এক বিঘা জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। দাম ভালো পেলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে। এখন পরিচর্যা করে ব্যস্ত সময় পার করছি। এই সবজি বিক্রি করে আমার সংসার ভালোভাবে চালাতে পারছি। কৃষি বিভাগ থেকে যদি আরও সহযোগিতা করে তাহলে সামনের বছর আরও এক বিঘা জমিতে সবজি চাষ বাড়িয়ে দিব।
নেত্রকোনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহনুমা নওরীন বলেন, ‘আগাম শীতকালীন সবজির সব সময় বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই কৃষকরা আগাম বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষে বেশি আগ্রহ হচ্ছেন। আগাম শীতকালীন সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে থাকে। আমরা মাঠে থেকে কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি যেন কৃষকদের ফসলের কোনো ক্ষতি না হয়। নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, জেলায় এবার আগাম শীতকালীন সবজির চাষ বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শাকসবজির আবাদ কীভাবে বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।