দেশের উন্নয়নে ঢাবিকে নেতৃত্বে চান রাষ্ট্রপতি
দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতৃত্বের ভূমিকার দেখতে চান বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান উদ্বোধনের সময় রাষ্ট্রপতি এ মন্তব্য করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার প্রতি আরো বেশি জোর দেয়াও আহ্বান জানান।
জাকজমকভাবে উদযাপিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান। শ্রম বাজার ও বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, এই জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি নেতৃত্বের জায়গায় দেখতে চান।পয়লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি হয়। করোনার কারণে মুল অনুষ্ঠান পিছিয়ে পয়লা ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটের সম্প্রসারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, কিন্তু এক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণার মানই মূল সূচক।
আর সে দিকে দৃষ্টি রেখে দেশের উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি আশা করব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ যাত্রাপথে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে।এসময় তিনি গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে জাতীয় ও আন্তজার্তিক বাজারের কথা মাথায় রেখে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ দেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এগিয়ে চলছে। কয়েক বছর পরই পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের ঢেউ বইতে শুরু করবে। তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ লক্ষ্যে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় বিশ্বব্যাপী সফলতার সাথে এগিয়ে যেতে পারে সেভাবে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির শুভক্ষণে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার অভিযাত্রায় বর্তমানে আমরা এগিয়ে চলেছি ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি, যারা আমাদের এই অভিযাত্রাকে বাস্তবে রূপ দিতে মাঠে কাজ করবেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এগোনো হচ্ছে।অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তোলাই মুল লক্ষ্য।শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে হলে আবাসন ও লাইব্রেরি সমস্যা দূর করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ঔপনিবেশিক আমলে বঙ্গভঙ্গ রদের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় ঘটনার আবর্তে ১৯২১ সালের ১ জুলাই রমনার সবুজ প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ববঙ্গের প্রথম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের সূতিকাগারের মতো ভূমিকা রাখে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।