

জলিলুর রহমান জনি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: যমুনা নদীর ভাঙনে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে শতাধিক পরিবার ও ফসলি জমি হুমকির মুখে।সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার ইতোমধ্যেই তাদের বসতবাড়ি এবং আবাদী জমি হারিয়েছে। এছাড়াও দুই শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় জনগণ তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তবে ভাঙনের তীব্রতা ও দ্রুততার কারণে প্রায়ই তারা সফল হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাইজবাড়ী, খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, মনসুর নগর এবং চরগিরিশ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে খাস রাজবাড়ী, মাইজবাড়ী, নিশ্চিন্তপুর এবং চরগিরিশ ইউনিয়নে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। যমুনার পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল মজিদ ও শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, হঠাৎ যমুনার পানি সামান্য বৃদ্ধি পেলেই ভাঙন শুরু হয়। ইতোমধ্যে তাদের বসতবাড়ি এবং ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। শ্রীপুর ও ফুলজোড় গ্রামগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বিঘা ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে। তারা আরও জানান, বন্যার সময় যমুনার চরাঞ্চলের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে; কিন্তু তাদের দেখার কেউ নেই।
খাসরাজ বাড়ী ইউনিয়নের রাজবাড়ীর বাসিন্দা আমজাদ হোসেন জানান, তার জীবদ্দশায় এটি বারোতম বারের মতো নদীভাঙনের শিকার হলেন। ভাঙনের কারণে তার পরিবারকে বারবার নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবলু মিয়া জানান, তার ওয়ার্ডের ৬০-৭০টি পরিবারের ঘরবাড়ি গত দুই সপ্তাহে তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সরকারিভাবে কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি।
কাজিপুর উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মুন্টু জানিয়েছেন, ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোর খবর কেউ নিচ্ছেন না। প্রায় ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে এবং ভাঙন ঠেকাতে গোটা এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
খাসরাজ বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাইফুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নের রাজবাড়ী ও খাসরাজ বাড়ী গ্রামে যমুনার তীব্র ভাঙনে শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এখন পর্যন্ত সরকারি সাড়া পাওয়া যায়নি এবং পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, নদী ভাঙন রোধ করা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প এবং এটি সরকারের উপর মহলের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। তিনি আরও জানান, কিছু সময়ের জন্য জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে, তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য বড় মাপের প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
এই ভাঙন শুধু সিরাজগঞ্জ নয়, দেশের বিভিন্ন নদী তীরবর্তী অঞ্চলে একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, অবিলম্বে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।