সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃষি শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান

Share the post
বাকৃবি প্রতিনিধিঃ কৃষি ডিপ্লোমার এক শিক্ষার্থী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি তার নিজস্ব মতামত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার পরপরই ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন কোনো তথ্যের বিচার বিশ্লেষণ না করেই এমন একটি পোস্ট তাদের প্রতি চরম অপমানজনক এবং তাদের নির্বুদ্ধিতার পরিচয়।
তার ওই পোস্টের প্রতিবাদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক শিক্ষার্থী বলেছেন, “বেশি না! আমাদের থিওরি দুইটা বিষয় পাস করো কেবল! তাতেই তোমাদের ২য় গ্রেড দেওয়া হবে।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. রাদিত সুজন এবং সে গাজীপুরে কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের পড়ুয়া।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে ওই পোস্ট করেন মো. রাদিত সুজন।
তার ফেসবুক পোস্টটি হুবুহু তুলে দেওয়া হলো- “কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ডিপ্লোমাদেরকে কেন ভয় পায় জানেন। তার কারণ হলো; ডিপ্লোমা চার বছরের এবং যদি আমরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করি তাহলে আরো চার বছর আমরা কৃষি নিয়ে পড়ালেখা করবো। মোট হলো আট বছর। এই আট বছর পড়ালেখা করে যদি আমরা কৃষি  ক্যাডারের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দিই, তাহলে তো তারা চার বছরের জ্ঞান নিয়ে আমাদের সাথে পারবে না।
আর সবথেকে বড় বিষয় হলো কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়, তারাই পরীক্ষা দেয় যারা কোন ভার্সিটিতে চান্স পায়না (দু একজন ব্যতিক্রম রয়েছে)। ডুয়েটের ১২০ জন ছাত্রের জন্য, সহকারী প্রকৌশল পদে বুয়েট রুয়েট কুয়েট চুয়েট এর ছাত্ররা নাকি জায়গা পায়না। তাই তাদের ভয় আমরা উচ্চশিক্ষা নিলে তাদেরও একই অবস্থা হবে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার দুজনের পড়া একটু আলাদা হতে পারে। কিন্তু কৃষি ডিপ্লোমা এবং বিএসসি ইন কৃষি পড়া একই, কারণ সার কিন্তু ওই ইউরিয়াই দিবে ওই ডিএপি দিবে ওই টিএসপি দিবে।
পার্থক্য শুধু তারা ইংরেজিতে পড়ে আমরা বাংলায় পড়ি। তাই তারা আমাদেরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করতেছে যাতে আমরা উচ্চ শিক্ষা না নিতে পারি।
(নিজস্ব মতামত)”
রাদিতের ওই পোস্টের কমেন্টে মো আরিফুল ইসলাম সরকার বলেন, “রাবি ইনজিনিয়ারিং সাবজেক্ট, গুচ্ছে ভালো পজিশন থাকা সত্ত্বেও কৃষি আসছি।”
আনন্দ মহন্ত নামে একজন বলেছেন, কৃষকরাও ওই একই সার প্রয়োগ করে। তাদেরকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হোক।
আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের বলেছেন, “কিন্তু কৃষি ডিপ্লোমা এবং বিএসসি ইন কৃষি পড়া একই, কারণ সার কিন্তু ওই ইউরিয়াই দিবে ওই ডিএপি দিবে ওই টিএসপি দিবে। ভাই নিচের প্রশ্নটা একটু রিডিং পড়িয়ে শুনুয়েন তো।”
রাকিবুল ইসলাম রকি বলেছেন, “ই মেইল কি, জিমেইল কি,নেটওয়ার্ক কি দুটো মাছের নাম দুটো ধানের নাম, TCT র পূর্ন নাম এসব পড়ে কৃষি অফিসার!  সেই ভাই সেই!  প্রাইমারির শিক্ষার্থীদেরকেও ২/৩ টা ২০/৩০ মিনিটের লেকচার দিলে আপনাদের উচ্চশিক্ষিতদের এই কোর্সে ১০০% উত্তর করতে পারবে। এইচএসসি সায়েন্সে কি পড়ানো হয় জানেন? কতগুলো বই আছে? কি কি চ্যাপ্টার? ৯০%+ মার্ক নিয়ে বাছাইপর্ব থেকে এডমিশন টেস্ট দিয়ে ভার্সিটিতে আসে। ৪ বছরে ১৫০+ কোর্স, সিলেবাসের কথা বাদই দিলাম, ১৮টা ডিপার্টমেন্ট যে আছে আমাদের, সেগুলার নামই তো উচ্চারণ করতে পারবেন না। টেনেটুনে এসএসসি পাস করে অ আ ক ক টাইপ কোর্স করে কৃষি অফিসার হবে!”
ফারিয়া সুপ্তি বলেছেন, এত সহজ? কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে দেখান।
জান্নাতুল ইসলাম জ্যোতি বলেছেন, ভাই চান্স না পেয়ে তো এগ্রিকালচারে আসছি। বেশি না শুধু  আমাদের যেকোনো ১০জনের চান্স পাওয়া ভার্সিটির নামগুলাই তো পড়ে শেষ করতে পারবেন না আপনি।
এর আগে দুপুরে বাকৃবির কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা কৃষিবিদদের প্রতি চলমান বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন এবং ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। এসময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমাধারী কৃষিবিদদের ৮ দফা দাবি অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এই মানববন্ধনের বিষয়ে কৃষি রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী রেজভী আহমেদ জনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই এসএসসি ও এইচএসসিতে আমাদের জিপিএ সর্বোচ্চ থাকে, তারাই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। অথচ ২.৫ জিপিএ নিয়ে কমার্স, আর্টস কিংবা সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে কেউ ডিপ্লোমা করে সরাসরি ১০ম গ্রেডে চাকরি পায়! আমরা দাবি করছি সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি হোক, যেখানে নির্দিষ্ট গ্রেডে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীরাই আবেদন করতে পারবে। বিসিএস নন-ক্যাডারে বর্তমানে অনেকেই ১০ম/১১তম গ্রেডে যোগ দিচ্ছেন।
তাহলে একজন অনার্স পাশ করা ব্যক্তি যেখানে জয়েন করছেন, সেখানে একজন ডিপ্লোমা ধারী কীভাবে ১০ম গ্রেডে যোগ দিচ্ছেন? এটা সরকারের কাছে আমাদের জোরালো প্রশ্ন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।