শেষ বারের মত মায়ের লাশ দেখতে আসার পথেই পদ্মা নদীতে স্ব-পরিবারে নিহত তেরখাদার মনির।
জাহাঙ্গীর আলম (মুকুল) স্টাফ রিপোটার খুলনা: মায়ের জানাজা নামাজ সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে,এবং তার পরেই দাফন সম্পন্ন হবে। সে জন্য সেহেরী খেয়ে রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১১ মসজিদ মার্কেটে কাপড়ের দোকানদার মনির শিকদার তেরখাদা সদর ইউনিয়নের পারোখালী গ্রামের বাড়ীতে পরম মমতাময়ী মাকে শেষবারের মতো দেখতে তিন কণ্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু মাকে শেষ বারের মতো আর দেখা হলো না, নিজেই স্বপরিবারে চলে গেলেন মায়ের সাথেই। পদ্মা নদীতে বালু ভর্তি বাল্কহেডের সাথে যাত্রীবাহী স্পিডবোটের সংঘর্ষে স্ত্রী হেনা বেগম, কণ্যা সুমি খাতুন (৭), রুমি খাতুন (৪) ও মনির শিকদার নিহত হন। প্রাণে বেঁচে আছে শুধু তাদের ৯ বছর বয়সী মেয়ে মীম খাতুন। পিতা-মাতা ও ছোট দুই বোন হারিয়ে বাকরুদ্ধ মীম; শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছে। তার বোবা কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার আকাশ-বাতাস।” সরেজমিনে তেরখাদার পারোখালীতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। নিহত মনির শিকদারের ভাই মোঃ কামরুজ্জামান অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এ প্রতিবেদকের সাথে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি জানান, গত রবিবার রাতে (মনির শিকদারের) মা লাইলী বেগম (৯০) বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে শুক্রবার নারায়নগঞ্জ থেকে ওয়াল্টনের শো’রুম বন্ধ করে দিয়ে বাড়ী ফেরেন মোঃ কামরুজ্জামান। আর সোমবার দিবাগত সেহেরী সেরে ঢাকার মিরপুর থেকে তেরখাদায় বাড়ীর উদ্দেশ্যে তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ফিরছিলেন মনির শিকদার। পদ্মা নদীর শিবচর এলাকায় পৌঁছে মনির শিকদারের সাথে দেখা হয়েছিল তার ভাইপো মিরাজ শিকদারের। সেখানেই শেষ কথা হলেছিল তাদের। মিরাজ তার নানীকে নিয়ে আগের স্পীডবোটে পদ্মা পেরিয়ে তেরখাদায় এসেছিল।
পরে জানা গেল-মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় পদ্মা নদীতে একটি বালু ভর্তি বাল্কহেডের সাথে যাত্রীবাহী স্পিডবোটের সংঘর্ষে ২৭জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের খুলনার তেরখাদা সদর ইউনিয়নের পারোখালী গ্রামের মৃত আলম শিকদারের ছেলে মনির শিকদার, তার স্ত্রী হেনা বেগম, তাদের শিশু কণ্যা সুমী (৭) ও রুমি খাতুন (৪) নিহত হয়েছেন। অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে গেছেন পরিবারের একমাত্র সদস্য মীম (৯)। রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১১ মসজিদ মার্কেটে কাপড়ের দোকানদার মনির শিকদার পরিবার ছিল স্বচ্ছল ও সুখী পরিবার। নিহতের ভাই মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, ‘নিহতদের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থান আমার মায়ের পাশে সারিবদ্ধ করে দাফন করবো বলে কবর তৈরি করেছি।’ কথা শেষ না করেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন তিনি। তেরখাদা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এফএম অহিদুজ্জামান সময়ের খবরকে বলেন, মাদারীপুরের শিবচরের ঘটনাস্থলে কথা বলেছি, তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে মরদেহ সরকারি তত্তাবধায়নে আনার ব্যবস্থা করেছি। মায়ের লাশ দেখতে এসে লাশ হয়ে গেল পুরো পরিবারটি। সত্যি বড় হৃদয় বিদারক। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চেষ্টা করবো পরিবারটির পাশে থাকার।