শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ মুনাফা করার উপায়

Share the post

শেয়ারবাজার থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা তোলার জন্য পুঁজিবাজার সম্পর্কে সম্মক ধারনা রাখতে হবে।পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগে জানতে হবে ভালো মানের বিনিয়োগ যোগ্য শেয়ার কোন গুলো। ভালো মানের অর্থ্যাৎ শক্তিশালী মৌল ভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা যায়। অন্যদিকে বাজার পতন দেখা দিলেও পুঁজি হারানোর ভয় থাকে না। এই জন্য আমাদের বিনিয়োগের পূর্বে খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন অতিরিক্ত মুনাফার লোভে মন্দ শেয়ারে বিনিয়োগ না করে ভাল মৌল ভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করি । এজন্যই ভাল কোম্পানি শেয়ার নির্বাচনের জন্য বিনিয়োগকারীগনকে জানতে হবে কোম্পানির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা। ব্যবসা পরিচালনায় কারা জড়িত, পরিচালকগণের সততা, দক্ষতা, কোম্পানির উৎপাদিত পন্য, সে সকল উৎপাদিত পন্যের বাজার চাহিদা কেমন, কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি কেমন, ঋন থাকলে তা মূলধনের কত অংশ, কোম্পানির আয় অনুপাতে ব্যয়ের হার, শেয়ার প্রতি আয়, রেকর্ড ডেট, লভ্যাংশ প্রদানের ধারাবাহিকতা, বছর শেষে যে লভ্যাংশ দেয় তার অনুপাতে শেয়ার মূল্য।

এই সকল তথ্য বিশ্লেষন করে আমরা বাজার থেকে ভালো মানের সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য শেয়ার ক্রয় করতে পারি। এছাড়াও আমাদের আরো কিছু বিষয়ের উপর মনোযোগী হতে হবে। কোম্পানীর শেয়ার এর কত শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আছে , মালিক পক্ষ কত শতাংশ শেয়ার ধারন করে, আমাদেরকে কোম্পানীর আর্থিক বিবরনী ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। এছাড়াও বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারন একটি মুখ্য বিষয়। বিনিয়োগকারী যতই জ্ঞানী ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হউক না কেন কোনো একক শেয়ার নিয়ে তার প্ল্যানিং বাস্তব রূপ লাভ নাও করতে পারে। এজন্য একাধিক শেয়ারে বিনিয়োগ করে ঝঁকি হ্রাস করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কি ধরনের শেয়ার কিনবেন এবং কোন সেক্টরের, এসব প্রশ্ন গুলি চলে আসতে থাকবে। আমরা একটি স্মার্ট পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট এর মধ্যে এ সকল সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে পারি।

প্রথমত বিনিয়োগের জন্য সেক্টর নির্বাচন করতে হবে, নির্বাচিত সেক্টর থেকে আমাদের আলোচিত বিষয় গুলি বিবেচনা পূর্বক ২টি করে মৌল ভিত্তির শেয়ার নির্বাচন করতে হবে। পোর্টফলিও এর সম্পদের মোট ৬০% টাকা বিনিয়োগ করুন অপর অংশ অপুরচুনিটি মানি হিসাবে রাখুন।

আমরা শেয়ার নির্বাচনের সময় নিচের বিষয় গুলো বিবেচনায় রেখে বিনিয়োগ করবোঃ
১. সময় নির্বাচনঃ আমাদের শেয়ার বাজারের সব কোম্পানী বৎসরে দুই ভাগে লভ্যাংশ দেয় অর্থ্যাৎ ডিসেম্বর ও জুন ক্লোজিং। তাই আমাদেরকে শেয়ার ক্রয় বিক্রয়ের একটা নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেম মেনে বিনিয়োগ করতে হবে। যে সকল শেয়ার জুন ক্লোজিং সেই সকল শেয়ার মার্চ এপ্রিলের দিকে বিনিয়োগ করতে হবে এবং মে-জুনের দিকে বিক্রয় করতে হবে। অন্যদিকে যে সকল শেয়ার ডিসেম্বর ক্লোজিং সেগুলিতে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বিনিয়োগ করতে হবে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বিক্রয় করতে হবে। এই নিয়মের ভিতর অবশ্যই আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে ৫২ সপ্তাহের মধ্যে বিগত বৎসর গুলিতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম কত ছিল এবং সময়কাল। আমাদেরকে সর্বনিন্ম দরে কয়েক ধাপে শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে এবং ক্রয় মূল্য এভারেজ করতে হবে।

২. ওয়াচ লিস্টঃ বিনিয়োগকারীদেরকে বাৎসরিক হিসেবে একটি ওয়াচ লিস্ট তৈরি করে রাখতে হবে।কারণ শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার পর নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেন নতুন করে এনালাইসিস করতে না হয়।এতে সময় অপচয় ও আপনার অপুরচুনিটি লস হবে।

৩. ট্রেন্ড নির্ধারনঃ প্রতিটি ব্যবসায়ের একটি ভাল সময় থাকে ঐ সময় নির্ধারণ পূর্বক বিনিয়োগ করতে হবে ডাউন ট্রেন্ডে থাকা অবস্থায় কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করা যাবে না। শেয়ারের ডাউন ট্রেন্ড শুরু হলে একটি নির্দিষ্ট লস দিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে।

৪. বিনিয়োগ মেয়াদ নির্ধারণঃ আমরা আমাদের বিনিয়োগ থেকে দুই ধরনের মুনাফা অর্জন করে থাকি প্রথমত নগদ লভ্যাংশ ও দ্বিতীয়ত বোনাস শেয়ার, এ ছাড়াও মূল্য বৃদ্ধি জনিত মুনাফা ও থাকে। প্রথমেই আমরা কি ধরনের মুনাফা পেতে চাই তার উপর ভিত্তি করে টাইম ফ্রেম নির্ধারণ করতে হবে। তা হতে পারে চারমাস, ছয় মাস ও ১ বৎসর। দীর্ঘ সময়ের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করতে হবে না এমন ক্যাপাসিটি থাকলে লং টার্মের জন্য ইনভেস্ট করাই আদর্শ।

৫. টোটাল মার্কেট সম্পর্কে ধারনাঃ প্রতি বৎসরের বাৎসরিক একটা পিক টাইম ও অফ টাইম থাকে অর্থ্যাৎ শীতের সময় কসমেটিকস ব্যবসা আবার গরমের সময় ফ্যান ও এসির ব্যবসা ভাল থাকে। ভাল ব্যবসার উপর ভিত্তি করে ত্রৈমাসিক ই পি এস এর ঘোষনা আসে এবং ঘোষিত ই পি এস এর উপর ভিত্তি করে শেয়ার দর উঠা নামা করে । অন্যদিকে টোটাল মার্কেট ডাউন ট্রেন্ডে থাকলে শর্ট টামের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রফিট টেক করতে হবে। লস হলেও তাই করতে হবে। আমাদেরও লাভ ও লসের সীমা নির্ধারন পূর্বক ট্রেড পরিচালনা করতে হবে।

৬. এক্টিভ শেয়ার ব্যবসায়ীঃ এক্টিভ শেয়ার ব্যবসায়ীরা চেষ্টা করে ৫-১০% শর্ট টার্ম (৩মাস) হলেও লাভ নিয়ে নেয়। ঘনঘন বাই সেল করা ভাল নয় তাতে লসের সম্ভাবনা বেশী থাকে। ক্রয় এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে পদ্ধতি অনুসরন করে অর্থ্যাৎ ক্রয় ও বিক্রয় কয়েকটি ধাপে করলে তাতে ঝুঁকি কমে ও লাভ বৃদ্ধি পায়। সুতরাং বিনিয়োগকারীগনকে যথাযথ প্রশিক্ষন ও জ্ঞান অর্জন পূর্বক এই মার্কেটে বিনিয়োগ করলে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন সম্ভব। এ প্রসঙ্গে বাফেট বলেন “নিজেকে উন্নত কর, নিজের দক্ষতাকে বৃদ্ধি করা হচ্ছে এক ধরনের সম্পদ যা কেউ কখনো হরন করতে পারবে না এবং যা থেকে লাভ নিশ্চিত”।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ইসলামী ব্যাংকে যোগ দিলেন নতুন দুই অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক

Share the post

Share the postইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে যোগ দিয়েছেন   মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদার ও  মো. ওমর ফারুক খান। মো. ওমর ফারুক খান এর আগে এনআরবি ব্যাংকে এমডি (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ১৯৮৬ সালে ইসলামী ব্যাংকে যোগ দেন। টানা ৩৭ বছরের কর্মজীবনে […]

শেয়ার বাজার নিন্মমুখী হওয়ার কারন সমূহ

Share the post

Share the postমো: শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার(লেখক ও কলামিষ্ট) : সাধারন বিনিয়োগকারীদের মতে শেয়ার কিনলেই দাম কমে যায়, আসলে কি তাই? আজকের আলোচনায় এ ব্যাপারে সাধারন বিনিয়োগকারীগনকে সহযোগীতার জন্যই এই বিনিয়োগ শিক্ষা মূলক লেখনী। মূল ঘটনা হলো যারা সঠিক দামে শেয়ার কিনতে পারেন না তাদেরই কেনার পর দাম কমে যায়। আসলে কিছু গতানুগতিক কারণে শেয়ার বাজার […]