মৃত্যুদন্ডিত ২০বছর পলাতক জসিম উদ্দিন’কে আটক র্যাব-৭। মোহাম্মদ মাসুদ চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী “জানে আলম” হত্যা মামলার ২০ বছর ধরে ড্রাইভারের ছদ্মবেশে পলাতক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী জসিম উদ্দিন’কে আটক করেছে র্যাব-৭,চট্টগ্রাম। গতকাল ০৩ফেব্রয়ারি বৃহস্পতিবার ২০২২ ইং তারিখ ১০ঃ৫০ ঘটিকায় একটি চৌকস আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ জসিম উদ্দিন আটক করে। গত ৩০ মার্চ ২০০২ খ্রিঃ তারিখে আদালতে স্বাক্ষী দেওয়ার প্রাক্কালে আনুমানিক সকাল ০৯ঃ০০ ঘটিকার দিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় কিছু দুস্কৃতিকারী ব্যবসায়ী জানে আলম (৪৮) কে তার ০১বছরের শিশু বাচ্চার সামনে নির্মম ও নৃশংসভাবে প্রথমে লাঠি সোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যূ নিশ্চিত করার জন্য গুলি করে হত্যা করে।
যা সেই সময়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম এর বড় ছেলে মোঃ তজবিরুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ২১ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার। যার মধ্যে জসিম উদ্দিন অন্যতম প্রধান আসামীএখানে উল্লেখ্য যে,এর মাত্র চার মাস পূর্বে অর্থাৎ গত ০৯ নভেম্বর ২০০১ ইং তারিখে নিহত ভিকটিম এর আপন ছোট ভাই অর্থাৎ বাদীর আপন ছোট চাচাকে ঐ বাহিনী একইভাবে নির্মম ও নৃশংসভাবে প্রথমে লাঠি সোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যূ নিশ্চিত করার জন্য গুলি করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনায়ও চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ১৩ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, এই মামলাতেও জসিম উদ্দিন অন্যতম প্রধান আসামী ছিলেন।গত ৩০ মার্চ ২০০২ ইং তারিখ ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যায় দায়েরকৃত মামলার ঘটনায় মহামান্য আদালত ২৪ জুলাই ২০০৭ ইং তারিখে রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে ১২ জনকে ফাঁসী এবং ০৮ জনকে যাবľীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করে থাকেন।
পরবর্তীতে উক্ত রায়ের আসামীগন মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে আপীল করলে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট জসিম উদ্দিন সহ মোট ১০ জনকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ও ০২ জনকে যাবľীবন এবং বাকীদের খালাস দেন। জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যাকান্ডের মুল কারণ হিসেবে জানা যায় যে, ব্যবসায়ী জানে আলম (৪৮) গত ০৯ নভেম্বর ২০০১ ইং তারিখে তার আপন ছোট ভাইয়ের হত্যা কান্ডে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ছিলেন। মূলত জানে আলম পরিবারের বড় ছেলে এবং আর্থিকভাবেও কিছুটা স্বচ্ছলও ছিলেন। তাই মামলা-মোকদ্দমার ব্যয়ভার তিনি বহন করতেন। এতে প্রতিপক্ষের আক্রোশ তার উপর দিন দিন বেড়ে যায়। প্রতিপক্ষের ধারনা ছিল যে,ব্যবসায়ী জানে আলকে হত্যা করলে ঐ পরিবারের মামলা-মোকদ্দমা চালাবার মত কোন লোক থাকবে না এবং প্রত্যক্ষভাবে আর কোন সাক্ষীও থাকবে না। আর্থিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়বে এবং তার সকল সম্পত্তি সহজে তারা গ্রাস করতে পারবে। এই কারনে ঘাতক চক্র প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্যবসায়ী জানে আলমকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে প্রথম হত্যার সংঘটিত হওয়ার পরপরই আসামী মোঃ জসিম উদ্দিন (৫০) চট্টগ্রাম মহানগরীর ডাবলমুড়িং থানাধীন ফকিরহাট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে ট্রাক ড্রাইভারি করে প্রায় তিন বছর বসবাস করে। এখান থেকে গিয়ে দ্বিতীয় হত্যার আলোচিত জানে আলম হত্যায় অংশগ্রহণ করেন।
এরপর কালুরঘাট এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বোয়ালখালী বিয়ে করে এবং লোহাগাড়ায় নিজের পত্রিক ভিটা-বাড়ী ফেলে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। এরপর কালুরঘাট এলাকায় ড্রাইভারী পেশায় তিন বছরের মত অবস্থান করে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ ডেবারপাড় বাসা নিয়ে ড্রাইভারী পেশায় চার বছর বসবাস করে। এরপর আবার ফকির হাটে বাসা ভাড়া নিয়ে সাত বছর ড্রাইভারী পেশায় অবস্থান করে। সেখান থেকে বাসা পরিবর্তন করে বন্দর থানাধীন নিমতলা বাসা ভাড়া নিয়ে ড্রাইভারী পেশায় এখন পর্যন্ত অবস্থান করতে ছিল। মূতল এই বিশ বছর সে ট্রাক ড্রাইভারের পেশায় নিজেকে আত্মগোপন করে রেখেছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, ট্রাক ড্রাইভারের লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজ পত্র তৈরীতে সে ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করত এবং নিজ আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭,চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, ব্যবসায়ী জানে আলমের হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী জসিম উদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানাধীন নিমতলা বিশ্বরোড এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখ রাত ১০ঃ৫০ ঘটিকায় র্যাব-৭,চট্টগ্রাম এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ জসিম উদ্দিন (৫০), পিতা- মৃত বেলায়েত আলী আটক করে।
পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী জানে আলম হত্যা মামলায় পলাতক মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত আসামী বলে স্বীকার করে। উল্লেখ্য যে, গত ২৭ জানুয়ারি ২০২১ ইং তারিখ উক্ত মামলাসমূহের ২নং ও অন্যতম প্রধান আসামী সৈয়দ আহম্মেদ (৬০), পিতা- মৃত ইয়াকুব মিয়া, সাং- আমিরাবাদ, থানা- লোহাগাড়া, জেলা- চট্টগ্রামকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ থানা এলাকা হতে আটক করে। গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে চট্টগ্রাম জেলার সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।