মোঃখায়রুল ইসলাম হৃদয় , মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : মুন্সীগঞ্জে সবজি সংরক্ষণে কৃষকের বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার বা জিরো এনার্জি কুল চেম্বার চমক সৃষ্টি করেছে। অন্তত সাত দিন কৃষকরা বিনা খরচায় উদ্বৃত্ত সবজি মানসম্মতভাবে সংরক্ষণ করতে পারছেন। এতে প্রান্তিক চাষিদের চোখে মুখে ফুঁটেছে হাসি। কোনো প্রকার সবজি এখন আর নষ্ট বা অবিক্রীত হয়ে পচে-গলে যাচ্ছে না। এই চেম্বারে অ-বিক্রিত সবজি সংরক্ষণ করে তা পরের দিন, এমনকি অন্তত সাত দিন পর্যন্ত বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করতে পারছেন। ফলে উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণ করে এখন বিক্রি করা যাচ্ছে। কোনো প্রকার রাসায়নিক বা কেমিক্যাল ব্যবহার না করে হিমাগারে সবজি সংরক্ষণ করায় ক্রেতারা বা ভোক্তারা পাচ্ছেন সতেজ ও ভেজালমুক্ত সবজি। আর আর্থিক ক্ষতি থেকেও কৃষকরা রেহাই পাচ্ছেন। দিতে হচ্ছে না কোনো প্রকার বিদ্যুৎ বিল।উৎপাদন এবং বাজারজাতকর এর মধ্যবর্তী কালীন প্রক্রিয়াজাতকরণ সময় গুনতে তো হচ্ছে না অতিরিক্ত পয়সা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের পাশে ছায়াযুক্ত ৪০ স্কয়ার ফুট জমিতে এই কোল্ড চেম্বার। ইট, বালু আর সিমেন্ট দিয়ে দুই ধাপে পাঁচ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল করা হয়েছে। দুই দেয়ালের মধ্যে তিন ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে। এই ফাঁকা স্থানটি বালু দিয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে। পিভিসি পাইপের মাধ্যমে ট্যাংক থেকে বালুতে অনবরত পানি ঝরছে, এতে বালু ঠাণ্ডা হয়ে মূল চেম্বারটি ঠাণ্ডা রাখছে। কৃষকরা এক দিন পরপর পানির ট্যাংকটি ভরে দিচ্ছেন বা বর্ষায় মুখ খুলে রাখলে বৃষ্টির পানিতেই ভরে যাচ্ছে ট্যাংক। এই কুল চেম্বারটি এখন কৃষকের হিমাগার নামে পরিচিতি পেয়েছে।
উৎপাদিত সবজি বাজারে ভালো দর না পাওয়া বা ক্রেতার অভাবে বাজার থেকে ফেরত আনা সবজি এই চেম্বারেই সংরক্ষণ করা হচ্ছে। আবার কখনো বিকেলে জমি থেকে সবজি সংগ্রহ করে চেম্বারে রেখে ভোরে সতেজ সবজি বাজারে নিতে পারছেন কৃষকরা। সদরের বজ্রযোগিনী গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এত সহজে সবজি সংরক্ষণ করা যেতে পারে তা আগে কল্পনায়ও ছিল না। এটি নির্মাণে খরচ অনেক কম। অনেক সময় বাজারে ক্রেতার অভাবে অবিক্রীত সবজি আমাদের ফেরত আনতে হয়। পরের দিন তা বাজারে নিয়ে গেলে সবজির চেহারা অনেকটা মলিন হয়ে যায়, এতে ক্রেতারা সবজিটি নিতে চান না। তখন ভালো দামও পাওয়া যায় না। পচে-গলে আমাদের অনেক সবজিও নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই চেম্বার ব্যবহার করার পর আমাদের সবজি এখন আর নষ্ট হচ্ছে না। তবে এই কুল চেম্বার কৃষকের জন্য বড় আশীর্বাদ এখন। মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার বজ্রযোগিনীর পুকুরপাড় গ্রামে উদ্ভাবনী এই কুল চেম্বার ১০টি কৃষি পরিবারের জন্য স্থাপন করে দিয়েছে কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের কৃষি বিভাগ। বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম হোসেন জানান, এটি নির্মাণে খরচ পড়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। এর সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও এখন নিজ খরচে এই চেম্বার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এই চেম্বারে রাখা যাচ্ছে ১২০ কেজি পর্যন্ত সবজি। এ কুল চেম্বারের ব্যবহার পদ্ধতি এবং উপকারীতার তথ্য যদি সারাদেশে ছড়িয়ে পরে, কৃষক সবজি চাষে আরো বেশি উৎসাহিত হবে।