নেত্রকোনায় মুঘল আমলের মসজিদ কালের সাক্ষী

Share the post
 সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা প্রতিনিধি : নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায়  মুঘল আমলে নির্মিত আটশ’ বাইশ বছর আগের প্রাচীন মসজিদটি সংস্কার ও রক্ষনা-বেক্ষনের বিবর্তনের অভাবে কালের সাক্ষী হয়ে থাকা মসজিদটি বিলীন হতে চলেছে।
কেন্দুয়া উপজলার মোজাফ্ফরপুর ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামে ঐতিহাসিক এ মসজিদটি অবস্থিত।মুঘল আমলে তৈরি এ ঐতিহাসিক মসজিদটি মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন। মসজিদটি সংরক্ষণের মাধ্যমে এই এলাকা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু অযত্ন, অবহেলা, সংস্কার ও প্রচারের অভাবে উপ-মহাদেশের অন্যতম এই ঐতিহাসিক মসজিদটি আজো সবার অজানা রয়ে গেছে।
হারুলিয়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, মুঘল আমলে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির অত্যন্ত স্নেহভাজন ও অনুসারী শাইখ মোহাম্মদ ইয়ার নামক এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ১২০০ খ্রীস্টাব্দে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।
মসজিদটির বর্তমান ঈমাম মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, মসজিদের ভেতরে দেয়ালের গায়ে ফার্সিতে শাইখ মোহাম্মদ ইয়ারের নাম এবং ১২শ’ খ্রীস্টাব্দ অঙ্কিত রয়েছে। এ ছাড়া ফার্সিতে আরো অঙ্কিত রয়েছে- ‘শাইখ মোহাম্মদ ইয়ারে বাসিন্দা, হারুলিয়া বসিটকে, আইজ দীলে সুধাবানী মসজিদ, হাজারে দু’সাদ্দেখানা দু’সনমে বুয়াত, বাহাতুপে আমুদা তারকে সালেশ’।
সাত শতাংশ জমির ওপর নির্মিত মসজিদটির চারকোনায় চারটি পিলার রয়েছে। যার উপরিভাগ কলসি দ্বারা গম্বুজাকার কারুকার্য মন্ডিত। চৌকোন বিশিষ্ট মসজিদটির পুরো ছাদ জুড়ে একটি মাত্র বিশালাকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের উত্তর পূর্ব ও দক্ষিন দিকে তিনটি লম্বাটে দরগা ও সামনের অংশে ছোট্ট একটি চৌচালা টিনের ঘর রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, জায়গা কম থাকায় মুসুল্লিদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে এই চৌচালাটি নির্মিত হয়ে থাকতে পারে।
নির্মাণশৈলী ও অবকাঠামো দেখে ধারনা করা যাচ্ছে, পোড়ামাটি, লালি, চুন, চিনি, চিটাগুড়, কষ এবং এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা এই প্রাচীন মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।
হারুলিয়া গ্রামের প্রবীণদের মধ্যে আব্দুল মন্নাফ, শফিকুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, খাদেরুল ইসলামসহ আরো অনেকে জানান, মুঘল আমলে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর শাসনকালে এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। উপমহাদেশে তৎকালীন সময় নির্মিত আটটি মসজিদের মধ্যে এটি একটি অন্যতম মসজিদ।
হারুলিয়া গ্রামবাসী ক্ষোভ ও আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, বছর দেরেক পূর্বে রাতের আঁধারে কে বা কারা মসজিদের ভেতরে ঢুকে ফার্সিতে অঙিত একটি বহু মূল্যবান প্রায় ৬-৭ কেজি ওজনের কষ্টিক পাথর চুরি করে নিয়ে যায়। কিন্তু সেই পাথরটি আজও উদ্ধার করা যায়নি।
গ্রামবাসী এটিকে হারুলিয়া দক্ষিণপাড়া পুরাতন জামে মসজিদ আবার গাইনের মসজিদ বলেও অবহিত করে থাকেন।
অনেকের ধারণা,  মসজিদটি গাইন সম্প্রদারের লোকেরা নির্মাণ করে ছিলেন বলে এটিকে গাইনের মসজিদও বলা হয়।
মসজিদটির সামনে রয়েছে, বিশালকার জালিয়ার হাওর। তৎকালীন সময় দূর দূরান্ত থেকে বর্ষাকালে নৌকা নিয়ে গাইন সম্প্রদায়ের লোকজন এ এলাকায় এসে ব্যবসা বাণিজ্য করতো। আশে পাশের কোথাও মসজিদ না থাকায় নামাজ পড়ার সুবিধার্থে তারাই এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। কালের বিবর্তনে তারা চলে গেলেও রয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি।
মুঘল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষন করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান হারুলিয়া এলাকাবাসী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ফেসবুক পোস্টের জেরে ইবি শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া

Share the post

Share the post ফেসবুক পোস্টের জেরে ইবি শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া ইবি প্রতিনিধি: বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে শাহ আজিজুর রহমান হল নামকরণের দিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ফেসবুক পোস্ট করার জেরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অনুষদভুক্ত হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলামকে ধাওয়া দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার […]

জবিস্থ পিরোজপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের নেতৃত্বে শায়ন-শামীম

Share the post

Share the post মোঃ হৃদয় (জবি প্রতিনিধি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অধ্যয়নরত পিরোজপুর জেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ পিরোজপুর  জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ’ এর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভূগোল ও পরিবেশ  বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ শায়ন গাজী সভাপতি এবং একই শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শামীম হাসান কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। মঙ্গলবার ( ১১-ই […]