সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ফসলের জমি নষ্ট হয়েছে। যেখানে উৎপাদিত ধানের মূল্য সাড়ে ৩শ কোটি টাকা। এই বন্যায় নষ্ট হয়েছে নানা জাতের সবজি খেত। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। কিছু অঞ্চলে পানি নামলেও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ভাটি এলাকার বেশ কিছু গ্রাম। গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে নেত্রকোনা জেলার বানভাসী মানুষ। জানা যায়, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার সীমান্ত উপজেলার কংস, সীমেশ্বরী ও উব্দাখালি নদীর পানিতে প্লাবিত হয় জেলার পাঁচটি উপজেলা। বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় পূর্বধলা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। পানিবন্দী হয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে মানবেতর দিন কাটছে হতদরিদ্র বানভাসি মানুষের। গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন বিভিন্ন সড়কে। আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। পূর্বধলার কাপাশিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক নিজাম উদ্দিন, রহিম মিয়াসহ অনেকেই জানান, অসময়ের বন্যায় নদ নদী উপচে দুর্গাপুর,পূর্বধলা, কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও সদরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এতে চোখের সামনেই তলিয়ে গেছে ফসল। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। নষ্ট হয়েছে আবাদকৃত নানা জাতের সবজি।তবে তিন চার দিন বৃষ্টিপাত তেমন না হওয়ায় নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু পূর্বধলার নাটের কোনায় বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। পানি নামতে সময় লাগবে আরও বেশ কিছুদিন। ফলে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। অনেকেই, ধারদেনা করে আমন আবাদ করেছিলেন। গবাদি পশু ও পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে কাটবে দিন এমন দুশ্চিন্তায় কৃষকেরা।
এদিকে কৃষকদের পুনর্বাসনে নানা পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ নেত্রকোনার উপ-পরিচালক মো.নূরুজ্জামান। তিনি জানান, এ বছর নেত্রকোনার ১০ উপজেলায় আমনের আবাদ হয়েছিলো ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯শ হেক্টর। তারমধ্যে বন্যায় ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমির ধান ও ১৭৭ হেক্টর সবজি নষ্ট হয়েছে। যেখানে সাড়ে ৩শ কোটি টাকা মূল্যের ধান নষ্ট হয়েছে। জেলার ৫ লক্ষাধিক কৃষকের মাঝে ৭৫ হাজার ৬৮০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অন্যদিকে মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরী বন্যা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। পানি নেমে গিয়ে ভেসে উঠছে দুর্গত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বন্যাকবলিত এলাকায় কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও সড়ক বিভাগের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে সম্প্রতি নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও সদর উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এতে অন্তত ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। গত শনিবার জেলার কলমাকান্দার উব্দাখালী, কংস, ধনু, সোমেশ্বরী, মগড়াসহ অন্য নদনদীর পানি বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হয়েছে।
পানি কমতে শুরু হলেও এখনো বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,আমন,শাকসবজির ক্ষেত ও ঘরবাড়িতে পানি রয়েছে। বন্যার পানির কারণে ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। পানির নিচে ডুবে আছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ফসল। জেলার সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, জেলার সাড়ে ছয়শ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ডুবে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২৮৫ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি।নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, সব মিলিয়ে বন্যার পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। আমরা ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছি। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ অন্য বিষয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত সমাধান করা হবে।