সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা: নেত্রকোনায় গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে নানা কারণে বেহাল অবস্থায় সময় কাটিয়েছে। জানা গেছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে এখন সমন্বয়হীনতা ও অভিভাবকশূন্যতা বিরাজ করছে।আরো জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে এই উপলক্ষে উপজেলাগুলোতে কর্মিসভার দিনক্ষণও ঠিক করছে বিএনপি। দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপির নেতারা। জানা গেছে জেলায় জাতীয় পার্টির অবস্থা বেশ নাজুক। জানা গেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন ও জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগে জেলা বিএনপিও ছিল ভিন্ন রকম। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর জেলা উপজেলা বিএনপির পালে হাওয়া লেগেছে। আর নতুন করে গঠিত হয়েছে নেত্রকোনা জেলা বিএনপি, এতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হন অধ্যাপক ডা ঃঃ আনোয়ারুল হক ও সদস্য সচিব হন রফিকুল ইসলাম হিলালী। ছাত্রদলের একাধিক সাবেক নেতা এখন জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পেয়েছেন, এতে নেত্রকোনা জেলা বিএনপি আরো উজ্জিবিত হয়েছে। বিএনপির যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পদ আঁকড়ে ধরে পড়েছিলেন তাদের কেউ কেউ মনক্ষুণ্ন হলেও তারুণ্যনির্ভর দল নিয়ে চাঙ্গাভাবে এখন সময় পার করছে জেলা বিএনপি।
এদিকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি বা সরকারের সফলতা তুলে ধরতে নেতাকর্মীদের এখন আর মাঠে দেখা যায় না। জেলা নেতাদের নিয়ন্ত্রণ নেই অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর। বিভিন্ন কায়দা-কৌশলে কিছু নেতা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়ে গেছেন। তবে তৃণমূলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই এ কথা মানতে নারাজ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় নেতারা। জানা গেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নানান মিথ্যা মামলা ভাঙচুর ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগে মামলা-হামলায় এক রকম নূয়ে পড়ে ছিল জেলা বিএনপির পালেও সকল সমস্যার হাওয়া লেগেছে। এদিকে আরো জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দেওয়া মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে থাকা বিএনপির কিছু কিছু নেতাকর্মী জামিন পেয়ে প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন। অনেকেই আবারও মিছিল-মিটিং এবং দলীয় কর্মসূচিতেও সক্রিয় হয়ে উঠছেন। দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠতে শুরু করেছে নেত্রকোনা জেলা ও সকল উপজেলা বিএনপি। এই মুহূর্তে ঘরোয়া কর্মসূচির মধ্য দিয়েই তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। জানা গেছে উপজেলা পর্যায়ে সংগঠনের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে দল দীর্ঘদিন পর সুসংগঠিত হচ্ছে। আর এক সময় দলের সুযোগ-সুবিধাভোগীরা এখন দলের সাংগঠনিক কাজ বাদ দিয়ে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ আনোয়ারুল হক বলেন, সাংগঠনিকভাবে বিএনপি আগের চেয়ে এখন আরও বেশি শক্তিশালী। সব অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার লক্ষ্যে আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। অন্যদিকে নেত্রকোনা জেলার কোনো উপজেলায় জাতীয় পার্টির কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। তবে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি বড় নেতারা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভুল করেও আর পা রাখেন না। সিনিয়র নেতারা যেন ঈদের চাঁদ।
নেত্রকোনা জেলায় জাপার তেমন সাংগঠনিক কোনো কাজ চোখে পড়ছে না। জাপার সাংগঠনিক কার্যক্রম তেমন স্বচল নয়। যা চলে শুধু নামে। কোনো উপজেলা অথবা ওয়ার্ডে তেমন কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই বললেই চলে। এদিকে আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু নেতাকর্মী জানান, সাবেক এমপি আশরাফ আলী খান খসরু এমপি থাকাকালে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। বরং তাদের আখের গোছানো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে এখন আওয়ামী লীগের এই দুঃসময়ে কোনো নেতাকর্মীদের কর্মসূচিতে পাওয়া যায় না। এক কথায় এখন আওয়ামী লীগ শূন্য হয়ে পড়েছে নেত্রকোনা, নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে রয়েছে অনেক বিতর্ক, কেউ বলে পকেট কমিটি কেউ বলে ঘরোয়ানা কমিটি।নেত্রকোনায় জাতীয় পার্টির কার্যক্রম চলছে ঢিলেঢালা ভাবে। তবে জাতীয় পার্টির স্থানীয় কিছু নেতা অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় পার্টিসহ অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন করা হয়েছে কাগজে-কলমে, কিন্তু সংগঠনের তেমন কার্যক্রম নেই।