নেত্রকোণার মানুষ বড় অসহায় সবাই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোণা প্রতিনিধি : বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং নদীবিধৌত সমতল ব-দ্বীপ অঞ্চল। বন্যা বাংলাদেশের জন্য অনেকটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীগুলো হারিয়েছে নাব্যতা, খালে বিলে সবখানেই পানির ঠাঁই নেই। সবখানে দখলদারদের বাণিজ্যিক থাবা। অন্যদিকে হাওড় বাঁওড়ের পানির উৎসব ভারতের আসাম ও মেঘালয়। সেখানে আষাঢ়ের মৌসুমে লাগাতার বৃষ্টি হলেই পাহাড়ে ঢল নামে। আমাদের হাওড়-বাঁওড় অধ্যুষিত নেত্রকোনার হাওররক্ষা বাঁধ নিয়ে বহুকালের রাজনীতি আছে। এখানে বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি নতুন নয়। এবারে সেই গাফিলতি চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। প্রথমে একবার বন্যায় বোরোর আবাদ তলিয়ে গেছে বানের পানিতে, কৃষক নিঃস্ব হয়েছে। সব শেষ হলে সবাই ঘরে ফিরে গেছে। তখনো বাঁধ নিয়ে আর ভাবেনি কেউ। এই দূরদর্শিতার সংকটে এবারে ঢলের পানিতে বাসছে জনপদ, ভাসছে মানুষ। খাবার সংকট, পানির সংকট, ওষুধের সংকট অথচ পানি থই থই চারদিকে। ঢলের স্রোত পেরিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া কষ্টসাধ্য। মানুষের প্রাণহানী ও ধনসম্পদের ব্যাপক ক্ষতিতো হয়েছেই। এখন জীবন বিপন্ন। প্রতি বছরই বন্যার সাথে যুদ্ধ করতে হয় এ নেত্রকোণার মানুষকে। এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে নেত্রকোণা আবারও প্লাবিত হয়েছে। রেকর্ড বন্যায় ডুবেছে বারহাট্টা সহ নেত্রকোণা জেলার বেশিরভাগ অঞ্চল। টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সোমেশ্বরী আর কংশ নদীর কূল উপচে নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ৯০ শতাংশেরও বেশি প্লাবিত নেত্রকোনার সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ।
ময়মনসিংহ বিভাগের অন্যান্য জেলার সঙ্গেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। টেলিফোন নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে ও দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। ফলে নেত্রকোণা কার্যত সারাদেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্নের পথে। জেলার কিছু উঁচু স্থান ও পাহাড়ি এলাকা ছাড়া সবখানে এখন পানি আর পানি।  পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ করা হয়েছে সব ধরনের কার্যক্রম। স্থগিত করে দেয়া হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। নেত্রকোণা অঞ্চলের এবারের বন্যা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। এর আগে যত বন্যা হয়েছে, তা মূলত হাওড় এলাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার গ্রাম, শহর ও উঁচু এলাকাও পানির নিচে চলে গেছে। তিনি বলেন, ভারতে আগামী দুদিন অতিভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতিরই আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বড় বিপদে পড়েছে নেত্রকোণার লাখ লাখ মানুষ। ঘরে পানি, সড়কে পানি, চারদিকে থইথই পানি। অনেকে ঘরের ভেতরে কলাগাছ কিংবা বাঁশের ভেলা বানিয়ে সেখানে অবস্থান করছে। বন্যার্ত এসব মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে। অনেকে অনাহারে-অর্ধাহারে আছে। সোমেশ্বরী,কংশ,ধনু, ও মগড়া নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা,নেত্রকোণা জেলার সদর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন, আটপাড়া,কেন্দুয়া, পূর্বধলা, দূর্গাপুর এবং কলমাকান্দা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ পর্যায়ে। গতকালও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের তোড়ে আরো পানি বাড়ছে হু হু করে। সোমেশ্বরী,কংশসহ সব নদনদীর পানি বিপৎসীমার ১ মিটারের বেশি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের। বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধার এবং ভয়াবহ বিপর্যয় মোকাবিলায় সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনীও।সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট গতকাল সকাল থেকে বন্যার্তদের উদ্ধার ও সহায়তায় কাজ শুরু করেছে। নৌকা দিয়ে প্লাবিত এলাকার বাড়িঘর থেকে পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেনাবাহিনী সদস্যরা।সেনাবাহিনী পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারসহ পাঁচটি কাজে তৎপরতা শুরু করেছে। জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বন্যার্ত মানুষদের ভিড় বেড়েছে। কোথায় কোথায় আবার আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা সংকট রয়েছে। এছাড়াও জেলার বেশিরভাগ স্থানে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। নদীর পানি উপচে বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নালা-নর্দমা আর বন্যার দুর্গন্ধযুক্ত পানির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও মানুষজন। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা। সব মিলিয়ে লাখ-লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি। বিশেষত বন্যা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ঘরের ভেতরে ও চারপাশে পানি থাকায় কয়েক দিন ধরে বন্দি অবস্থায় আছেন। প্রতিদিন পানি বাড়ছে, ফলে বাসার অনেক জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়াতে ভোগান্তির শেষ নেই। ঘরে রান্না করারও কোনো উপায় না থাকায় চিড়া-মুড়ি খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন অনেকেই। এই মানবিক বিপর্যয় রুখে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। মানুষের এই কান্না দেখা যায় না। এখন দল-মত নির্বিশেষে দরকার মানুষেরে পাশে দাঁড়ানো।
বাংলাদেশে স্মরণকালের ইতিহাসে বড় বন্যাগুলো হয়েছিল ১৯৭৪, ১৯৭৭, ১৯৮০, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০০৭ সালে। এর মধ্যে ১৯৯৮ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। এই বন্যায় নেত্রকোণার অধিকাংশ অঞ্চল ডুবে গিয়েছিল। অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মারা যায়। খাদ্যের অভাব ও নানারকম রোগেও বহু মানুষ প্রাণ হারায়। উজান থেকে নেমে আসা পানির আধিক্যই এ বন্যার মূল কারণ। তাই যেসব স্থানে নদীর পানি প্রবাহের চাপ বেশি সেসব স্থানে পরিকল্পিতভাবে কিছু বাঁধ নির্মাণ করা না হলে বারবার এই প্রলয়ংকরি বন্যা দেখা দেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কালের বন্য অকালে হচ্ছে। তাই হাওড় রক্ষা বাঁধ পোক্তভাবে নির্মাণ না করলে মানুষের এই কান্নায় বারবার আকাশ বিদীর্ণ হবে।অতীতের কথা মাথায় রেখে বন্যার্তদের পাশে সরকারসহ দেশবাসীর এগিয়ে আসা উচিত। এ বন্যা সমগ্র নেত্রকোণায় ছড়িয়ে পড়েছে। বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। অনেক এলাকায় মানুষের দুর্গতি ভাবনার বাইরে। সামরিক রাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। মানুষের কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। এ সময় বানভাসি দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এ দুঃসময়ে দলমত নির্বিশেষে সবার এগিয়ে আসা উচিত। উদ্ধার কাজ থেকে খাবার বিতরণ সবাই মিলে না করলে মানবিক বিপর্যয় আরো দেখা দেবে অচিরেই। সবাই একসঙ্গে হাত বাড়ালে এ সংকটের পথ পাড়ি দেওয়া সহজ হবে। ইতিহাস সে কথাই বলে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোবারকপুরে কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা ও ইফতার মাহফিল

Share the post

Share the postইয়াসিন আরাফাত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ  চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুরে কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোবারকপুর মাঝাটোলা তরুণ সংঘের আয়োজনে শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে মাঝাটোলা গ্রামে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন মাদরাসার ৩৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজাহার আলী। কোরআন […]

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি ইউনিটের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

Share the post

Share the postসুবংকর রায়, ইবি প্রতিনিধি : থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদভূক্ত তিনটি বিভাগ এবং কলা অনুষদের একটি বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত স্বতন্ত্র ‘ডি’ ইউনিটের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বলা হয় আগামী ১৬ মার্চ দুপুর ১২ টা থেকে ২৮ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত আবেদন করতে […]