

আশিকুর রহমান, নরসিংদী : সৃজন করা ভূয়া ভায়া দলিল ও কাগজপত্র দাখিল করে অন্যের জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নরসিংদী সদর সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। আর এসব অপকর্মের মুল কারিগর ওই কার্যালয়ের দলিল লেখক জহিরুল ইসলামের। এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগও করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
লিখিত অভিযোগ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের ভুক্তভোগী জাকির হোসেন করিমপুর মৌজার আর এস ২৪৬০ খতিয়ানের ১১৪৫০ নং দাগে আড়াই শতাংশ জমি কেনার জন্য দারস্ত হন একই ইউনিয়নের বাউশিয়া গ্রামের সফিউল্লাহ ছেলে দলিল লেখক জহিরুল ইসলামের নিকট। বিক্রেতার জমির একটি ভায়া দলিল সহ অন্যান্য কাগজপত্রাদি সঠিক আছে কিনা যাচাই-বাছাই করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পরে দলিল লেখক জহিরুল ইসলাম ভায়া দলিলটি সৃজন করা ভুয়া জানতে পেরে বিক্রেতার যোগসাজশে ভুক্তভোগীর সাথে প্রতারণা করে তিনি সাবরেজিস্টারের মাধ্যমে ভূয়া দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও কাগজপত্রাদি যাচাই করে দেখা যায়, দলিল লেখক জহিরুল ইসলাম, সনদ নং- ২১৩। করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি কর্মকতা ইব্রাহিম খানকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ভূয়া দলিল দাখিল করে রৌশনারা বেগমের নামে জমি খারিজ করে নেন। সেই খারিজের সুবাদে সদর সাব রেজিস্ট্রার ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে সৃজন করা ভুয়া ভায়া দলিল দিয়ে জাকির হোসেনের নামে বেল এওয়াজ হেবা দলিল করেন। যার দলিল নং ৫০, তারিখ ০৩/০১/২০২৪ এবং সৃজন করা ভুয়া ভায়া দলিলের নং ১০১২৫, তারিখ ২২/০৬/১৯৮৩। এখানেও সাফ কাবলা না করে, সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন দলিল লেখক জহিরুল।
ভুক্তভোগী জাকির হোসেন প্রতিনিধিকে বলেন, দলিল লেখক জহিরুল আমার পাশ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় সুবাদে আমি জমি ক্রয় করার জন্য ভায়া দলিল সহ কাগজপত্রাদি সঠিক আছে কি’না দেখার জন্য দেই। পরে সে আমাকে বলে সবকিছু ঠিক আছে এবং জমি কেনার আগে বিক্রেতা রৌশনারা বেগমের নামে আপনার নিজ খরচে খারিজ করে নিতে হবে। পরে খারিজের জন্য জহিরুলের সাথে ৩৩ হাজার টাকায় রফা-দফা হয়। খারিজ হওয়ার পর দলিল সাব-কাবলা রেজিস্ট্রি করতে আরও ৩০ হাজার টাকা লাগবে বলে জহিরুল দাবি করেন। এতটাকা দিয়ে দলিল করতে পারবো না জানিয়ে কাগজপত্রাদি ফেরত চাইতে গেলে সে আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়। পরবর্তীতে বাধ্য হয়েই তাকে দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করি। এবিষয়ে জানতে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকতা ইব্রাহিম প্রতিনিধিকে বলেন আমার ভূল হয়ে গেছে। আমি সঠিকভাবে দলিল চেক করতে পারি নাই। আমি খারিজ বাতিল করে দিবো।
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার আরিফুর রহমান বলেন, আমার অফিসের কোনো ব্যতয় ঘটেনি। বিধি অনুযায়ী খারিজ প্রাপ্ত হয়েই দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে। এখানে সাবরেজিস্টারের কোনো ভূল নেই। এছাড়াও আমরা প্রতিমাসে নিয়মিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এলটি পাঠাছি। এসব ক্রুটি-বিচ্যুতি দেখার দায়িত্ব তাদের। আমাদের কাজ শুধু জমি রেজিস্ট্রি সম্পাদন করা।এবিষয়ে সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকতা সিনথিয়া হোসেনের কাছে গিয়ে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকতা ইব্রাহিম খানের খারিজ সংক্রান্ত অনিয়ম প্রসঙ্গে কথা বলতেই তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, আমার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নিয়েছেন? আমাকে কি ফোন দিয়েছেন? আমার নাম্বার ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। আমার সাথে কথা বলতে হলে আগে ফোন করে অনুমতি নিতে হবে। দেখতেই পারছেন, আমার হাতে এখন অনেক কাজ। এখন আসতে পারেন বলে তিনি সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দেন।
উল্লেখ ভুক্তভোগী জাকির হোসেন দলিল সম্পন্ন করে, তার ক্রয়কৃত জমিতে ঘর নির্মাণ করতে গেলে, জমির প্রকৃত মালিকগণ বাঁধা প্রদান করলে, সৃজন করা ভুয়া দলিলের বিষয়টি সর্বত্র জানাজানি হয়।