নবল সংকট সহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত জলঢাকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

Share the post

হাসানুজ্জামান সিদ্দিকী হাসান,নীলফামারী জেরা প্রতিনিধি: জনবল সংকট সহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে জনবল সংকট সহ  নানা সমস্যায় জর্জরিত। উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ১৯৬৮ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তী সময়ে ৫০ শয্যায  উন্নতি করা হয়। প্রতিসষ্ঠার পর হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত হাসপাতাল টিতে মনঞ্জুরীকৃত জনবল না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য আসা রোগীররা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

মঙ্গলবার ও বুধবার দুদিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার  ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগে প্রতিদিন বিভিন্ন ইউনিয়ন  থেকে শতশত রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। আর বহিঃবিভাগ সহ জরুরী বিভাগে  চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের ভীড় ও দীর্ঘ লাইন। আর এসব রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। এদিকে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থেকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা।কারন জনবল সঙ্কট সহ বিভিন্ন সমস্যার কারনে ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেনা হাসপাতাল কতৃপক্ষ।  ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এদিকে পুরাতন ভবনে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে নতুন ভবনে  ৫০ শয্যার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলেও সে তুলনায় কোনো বরাদ্দ মিলছে না। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন  ওয়ার্ডে রোগীরা মেজে ও বারান্দায় বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।  হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা জানান চিকিৎসক কম থাকায় ঠিক মতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না। সকালে ডাক্তার ১বার এসে দেখে গেছেন আর সারাদিন নাই।

এ বিষয়ে কর্তব্যরত স্টাফ নার্সরা জানান চিকিৎসকের সংকট আছে। তবে তারা নিয়মিত নোগীদের সেবা প্রদানের জন্য চেস্টা করছেন।

এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃ ও জরুরী বিভাগে  চিকিৎসা সেবা নিতে আসা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল গ্রামের গোলাম আজম , বালাপাড়া গ্রামের শহিদ ,ডাউয়াবারী নেকবক্ত  গ্রামের  আজিজুল ইসলাম, মহসেনা খাতুন,বালাগ্রামের রহিমা বেগম সহ আরও অনেকের সাথে কথা হয়। তারা সবাই বলেন পর্যাপ্ত  ডাক্তার না থাকায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে  থেকে ভোগান্তির শিকার হয়ে অনেক অসুস্থ রোগী আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

এদিকে বহিঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগে  কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান এখানে সবসমঢ রোগীর চাপ থাকে বেশী। একানে বহিঃ বিভাগে প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগী দেখা হয। প্রতিদিন প্রায় ৯০ জন রোগী দেখা হয।  তারপরেও অনেক রোগী থাকে অপেক্ষায়। আর জরুরী বিভাগে ২৪ ঘন্টা সেবা দেওযা হয়।

হাসপাতাল সুত্রে জানাগেছে চলতি বছরের জানুয়ারী হতে মে মাস পর্যন্ত বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ৭১ হাজার ২১০ জন। জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন ২৭ হাজার ৭৩৮ জন। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেবা নিয়েছেন ৯হাজার ৪৫৯ জন।

উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায় ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উপজেলার এই ৫০ শয্যার হাসপাতালে মোট পদ রযেছে ১৯৯ জন। এর মধ্য কর্মরত রয়েছেন ১১৯ জন। এ হাসপাতালে সরকার অনুমোদিত প্রথম শ্রেনীর  ৩৩ জন চিকিৎসকের স্থলে রয়েছে ১১ জন চিকিৎসক ।এ ১১ জন চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ২য় শ্রেনীর৷ নার্স ৩৪ জনের মধে আছেন ৩৩ জন। ৩য় শ্রেনীর ষ্টাফ ১০৪ জনের মধ্যে কর্মরত আছেন ৫৮ জন। ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী ২৮ জনের মধ্যে ১৫ জন।সিএইচ সিপি ৪৩ জনের মধ্যে  ৪২ জন আছেন। পরিচ্ছন্নকর্মী ৫ জনের পদ থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ১ জন। এদিকে অপারেশন থিয়েটারে সার্জারী এবং এনেস্থেশিয়া কনসালটেন্ট না থাকায় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, গাইনি ও সার্জিক্যাল স্পেশালিস্টের পদ  শূন্য থাকার কারনে সিজারিয়ান অপারেশনের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকায় রোগীরা পরেন ভোগান্তিতে।

তাছারা অত্যাধুনিক এক্স-রে, আল্টানোস গ্রাম মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে জনবল না থাকার কারনে।ডেন্টাল ও চক্ষু রোগ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে কিন্তু নেই সামগ্রী।

তাছাড়া হাসপাতালের নতুন ও পুরাতন দুটি সরকারি এ্যাম্ভুলেন্স থাকা সত্বেও সেগুলো বর্তমানে নষ্ট হয়ে পরে আছে। এই গাড়ী দুটির পুরাতনটির ইন্জিনের সমস্যা, অপর নতুন টির টায়ার সমস্যা থাকায় তা বিআরটি এ-র রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার না থাকার কারনে সমাধানের জন্য  বিআরটি এ-র   অনুমতি  নিতে পারছে না।আর গাড়ীর ক্রয় সংক্রান্ত কাগজ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে থাকায় তা মেরামত  করতে  পারছে না তাই রোগীরা তার সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে সেন্ট্রাল ষ্টোর কমপ্লেক্স না থাকার কারনে সকল যন্ত্রপাতি সহ জিনিস নষ্ট হচ্ছে বিভিন স্থানে রাখার কারনে।  হাসপাতালের  স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গ্রামীন ফোনের সরকারী সিম বন্ধ থাকায় তিনি ও জনগন সেবা দেওয়া নেওয়ার জন্য সমস্যা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে  উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু হাসান মোঃ রেজওয়ানুল কবীর  বলেন, হাসপাতালটি নানা সমস্যায় জর্জরিত, তা সংস্কার ও মেরামতের জন্য জনবলের চাহিদা দিয়ে বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সমস্যাগুলো সমাধান হলে আর কোন সমস্যা হবে না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ফরিদপুরে প্রতিমা ভাংচুরের অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে সঞ্জিত বিশ্বাস নামে এক ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার

Share the post

Share the postসাজ্জাদ হোসেন সাজু(ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি) : ফরিদপুরের ভাঙ্গা বাজারের হরি মন্দির ও কালি মন্দিরে নির্মিতব্য প্রতিমা ভাংচুরের অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে সঞ্জিত বিশ্বাস (৪৫) নামে এক ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  সোমবার বিকেলে ফরিদপুর জেলা পুলিশের দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া সঞ্জিত বিশ্বাস ভারতের […]

ঝালকাঠিতে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে যুবকের মৃত্যু

Share the post

Share the postমো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ ঝালকাঠির নলছিটিতে গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে রাজ্জাক খান (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কুমারখালীর পশ্চিম চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। রাজ্জাক খান নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ঢাপর গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভোররাত ৪টার দিকে ট্রলার নিয়ে উপজেলার […]