ও পলাশ ও শিমুল কেন এ মন মোর রাঙালে…

চট্টগ্রাম: মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতাদের পাশ কাটিয়ে জাগবে নতুন প্রাণ। নিষ্প্রাণপ্রায় এই কংক্রিটের শহরে ভালোবাসার সে কুহুস্বরে মুখর পরিবেশে মন যেন কোনো উদাসলোকে হারিয়ে যেতে যায়। মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধ জানিয়ে দিয়ে যায়, সত্যি সত্যিই বসন্ত ঋতুর রাজা। উদাস আকুল মন নেচে ওঠে দখিনা হাওয়ায়। সৌরভ তার ভরে দেয় মন-প্রাণ। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের সঙ্গে প্রকৃতিতে লেগেছে তার ছোঁয়া। ন্যাড়া গাছগুলোতে আসতে শুরু করেছে নতুন পাতা। শিমুল আর পলাশ গাছে ফুটেছে রঙিন ফুল; ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে গ্রামের মেঠো পথকে করে দিচ্ছে রঙিন। গ্রামবাংলার চিরাচরিত এসব চিত্র একসময় দেখা যেত আমাদের এই নগরেও। ইট-কাঠ-লোহার অট্টালিকার ভিড়ে হারিয়ে গেছে শত প্রজাতির হাজারো ফুল-ফলের বৃক্ষরাজি। তবে এখনো কিছু গাছের দেখা মিলে চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি পাহাড়ে আর পাহাড়তলীর আমবাগান এলাকায়। বসন্তের এই সময়ে গাছগুলো জানান দেয় তাদের সৌন্দর্যের কথা। বসন্তের পাতাবিহীন ন্যাড়া ডালে আগুনের লেলিহান রক্ত আভায় শোভিত হয়ে এখন যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে শিমুল ফুলের সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যকে আরো রঙিন করে তুলেছে টিয়া, ময়না, হলুদিয়া সহ নানার জাতের পাখির কলতান।
বায়ান্নর ৮ ফাল্গুন তথা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার মিলেমিশে একাকার। তাই ফাগুন এলেই আগুন জ্বলে মনে, ফাগুন এলেই কোকিল ডাকে কুঞ্জে।
তেমনি ন্যাড়া গাছে রক্তবর্ণে রঞ্জিত শিমুল ফুল আর এই ডাল থেকে ওই ডালে উড়ে বেড়ানো হলুদিয়া পাখির সৌন্দর্যের অপরূপ চিত্রে হারিয়ে যায় মন প্রকৃতির সান্নিধ্যে। হলুদিয়া পাখি ন্যাড়া শিমুল গাছের ফুলের মাঝে নিজের লাল ঠোঁটটি দিয়ে মধু সংগ্রহ করে নিতে ছুটছে এক ডাল থেকে আরেক ডালে। এ চিত্রে মন জুড়াবে সবার, বিষণ্নতা হবে দূর। মানুষের জীবনে ঋতুরাজ বসন্ত নিয়ে আসে প্রেম ও বিদ্রোহের যুগল আবাহন। সে আবাহনে আজ খুলে গেছে দখিনা দুয়ার। মেয়েরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশসহ নানা রকম ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙের শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পায়জামা ও ফতুয়ায় শাশ্বত বাঙালির সাজে উৎসবের হাওয়ায় ভেসে বেড়াবে আজ পহেলা ফাল্গুনে।