ঐতিহাসিক নাটরকোণা গ্রাম থেকে এসেছে ‘নেত্রকোনা’

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : ৫৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনের দেশ বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে টেকনাথ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। দেশের আট বিভাগে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ) ৬৪ জেলা। প্রতিটি জেলার নামকরণের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। এসব ঘটনা ভ্রমণপিপাসু উৎসুক মনকে আকর্ষণ করে। তাই ধারাবাহিকভাবে জানানো হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত নেত্রকোনা জেলার ইতিহাস প্রাচীন ঐতিহ্যে টইটুম্বুর ও ঐতিহ্যের বিচিত্র ঘটনা সম্ভারে গর্বিত। গারো পাহাড়ের পাদদেশ লেহন করে এঁকেবেঁকে কংস, সোমেশ্বরী, গণেশ্বরী, মহেশ্বরী, ঘোড়াউত্রা নদীসহ অন্যান্য শাখা নদী নিয়ে বর্তমান নেত্রকোনা জেলার জলধারার উদ্ভব। তৎকালীন সুসঙ্গ, নাসিরূজিয়াল, মৈমনসিংহ, সিংধা ও খালিয়াজুরী পরগণার ভূমি নিয়ে বর্তমান নেত্রকোনা জেলার অবস্থান। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮২ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে নেত্রকোনা মহকুমার কাজ শুরু হয়। ব্রিটিশ আমলে এ জেলায় কৃষক বিদ্রোহ, পাগলপন্থী বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন ও তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৯৮৪ সালের ১৭ জানুয়ারি নেত্রকোনা মহকুমাকে জেলা ঘোষণা করা হয়। জনশ্রুতি আছে, নেত্রকোনা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মগরা নদীর বাঁক চোখের বা নেত্রের কোণের মতো বলে এই জায়গার নামকরণ হয়েছে ‘নেত্রকোনা’। কেউ কেউ এমনও মনে করেন, মগরা ও কাংশ নদী পরিবেষ্টিত এই জেলা দেখতে চোখ বা নেত্রের মতো দেখতে বলেই এমন নামকরণ। বিলু কবীরের লেখা ‘বাংলাদেশের জেলা: নামকরণের ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, নাটোরকোণা গ্রামটি বর্তমানে নেত্রকোনা জেলা শহরের সাত-আট কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। একসময় প্রশাসনিক কাজকর্ম নাটোরকোণা গ্রামেই চলতে থাকে। এই ‘নাটোরকোণা’ নামটিই কালের পরিক্রমায় ‘নেত্রকোনা’ উচ্চারণরূপ ধারণ করে।
নেত্রকোনা জেলায় প্রাচীন ঐতিহাসিক বেশ কিছু স্থাপত্য রয়েছে। সেগুলোর অধিকাংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত। কিছু স্থাপত্য এখনও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য— মদনপুরের হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (র.) মাজার, শাহ সুখুল আম্বিয়া মাজারের পাশে মোগল যুগের এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ, পুকুরিয়ার ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গ, নাটোরকোণার ধ্বংসপ্রাপ্ত ইমারতের স্মৃতিচিহ্ন, দুর্গাপুর মাসকান্দা গ্রামের সুলতানি যুগের এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। পর্যটন আকর্ষণ স্থানের তালিকায় রয়েছে দুর্গাপুরের বিজয়পুরে নৈসর্গিক পাহাড়ের সাদা মাটি, বিরিশিরি কালচারাল একাডেমি, কমলা রানি দীঘি, টংক শহীদ স্মৃতিসৌধ, রানিখং মিশন টিলায় ক্যাথলিক গির্জা, রাশমণি স্মৃতিসৌধ, কথিত নইদ্যা ঠাকুরের ভিটা, কলমকাকান্দার লেগুরা, চেংটি ও গোবিন্দপুর পাহাড়, ঐতিহাসিক সাত শহীদের মাজার, কেন্দুয়ার রোয়াইলবাড়ীর পুরাকীর্তি, সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি, নেত্রকোনার হাওর, সোমেশ্বরী নদী, সাদা মাটি, সিলিকা বালি, বালিশ মিষ্টি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নেত্রকোনায় বাপ দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চায় শীতল পাটির কারিগররা

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : শীতল পাটি বাংলার সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। শীতল পাটি আমাদের সভ্যতা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের অংশ। এছাড়া বাংলাদেশের শীতল পাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ। জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিক এ স্বীকৃতি ঘোষণা দেয়। এক সময় সারাবিশ্বে ছিল শীতল পাটির খ্যাতি। আমাদের গৃহস্থালির নানা দরকারি জিনিসের […]

নেত্রকোনায় বন্যায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার আমন ফসলের ক্ষতি, অন্যদিকে ছয়শ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ডুবে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ফসলের জমি নষ্ট হয়েছে। যেখানে উৎপাদিত ধানের মূল্য সাড়ে ৩শ কোটি টাকা। এই বন্যায় নষ্ট হয়েছে নানা জাতের সবজি খেত। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। কিছু অঞ্চলে পানি নামলেও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ভাটি এলাকার […]