

আশিকুর রহমান, নরসিংদী : নরসিংদীর পলাশ উপজেলা ঘোড়াশালে গণপিটুনীতে সহোদর দুই ভাই নিহত হয়েছে। সোমবার (৩১ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার ঘোড়াশাল পৌরসভার ভাগদী গ্রামের কড়ৈরতৈল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।নিহতরা হলেন, কড়ৈরতৈল গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের ছেলে রাকিব (২৫) এবং সাকিব (২০)। এসময় আহত হয়েছেন তাদের পিতা আশরাফ উদ্দিন ও মা রাবেয়া খাতুন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার ভোরে ভাগদীর কড়ৈরতৈল এলাকায় দুই যুবক অটোরিকশার ব্যাটারি চুরি করতে যায়। এসময় টের পেয়ে এলাকার লোকজন হিমেল নামের এক যুবককে ধরে ফেললেও আরেকজন পালিয়ে যায়। পরে এলাকার লোকজন তাকে গণপিটুনী দেয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
এই ঘটনা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিকেলে ঘটনাস্থলে যায় রাকিব, সাকিবসহ অন্যান্যরা। এসময় উভয়পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে আবার তারা সন্ধ্যায় ১৫ থেকে ২০ জন যুবক মিলে ওই স্থানে গেলে স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় দুই ভাই রাকিব, সাকিব ও তাদের বাবা-মাকে আটক করে গণপিটুনী দেয় স্থানীয়রা। গুরুত্বর আহত অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সাকিবের মৃত্যু হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে মারা যায় বড় ভাই রাকিব।এঘটনার পর পরই ভাগদী গ্রামের বাসিন্দারা ফুঁসে ওঠে। তারা বলেন, কড়ৈরতৈল এলাকার লোকেটা কাজটা ভালো করেন নাই। এমন একটা পবিত্র দিনে এমন বর্বর আচরণ আল্লাহ্ সহ্য করবেন না। তারা পরিচিত তাজা দুইটা প্রাণ কেড়ে নিলেন। চুরির নাটক সাজিয়ে তারা পরিকল্পিতভাবে দুই ভাইকে হত্যা করেছে। আমরা দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
নিহতের চাচী হাজেরা বেগম বলেন, এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা চেয়ে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় আজকে ঈদের দিন ঘুরতে গেলে সন্ত্রাসীরা সাকিব ও রাকিবকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাকিবের ৩ মাসের একটি কন্যা শিশু রয়েছে। পৃথিবীর কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে তার বাবাকে হারালো। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কতর্ব্যরত ডা. সুদীপ কুমার সাহা বলেন, সাকিব ও রাকিব নামে দুইজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিলো। এরমধ্যে সাকিবকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। আর রাকিবের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। তাদের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
এদিকে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, চোর সন্দেহে একজনকে ভোরে পিটুনী দেয় স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশের তত্বাবধানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে এরই প্রতিবাদ করতে গিয়ে পূনরায় পিটুনীর ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় একজন সদর হাসপাতালে এবং অপরজন ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যায়। আমরা চাঁদাবাজির কোন তথ্য পাইনি। আমরা তদন্ত করে দেখছি এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে নি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে, এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।