ইম্পেরিয়ালসহ দুই হাসপাতালকে করোনায় ব্যবহারের ঘোষণা সরকারের
চট্টগ্রাম: অবশেষে চট্টগ্রাম নগরের ফয়’স লেক এলাকায় অবস্থিত ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (২৬ মে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচাক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক চিঠিতে এই দুটি হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড ১৯ হাসপাতাল ঘোষণা করে রোগী ভর্তির প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় চট্টগ্রাম বিভাগে (বিশেষত চট্টগ্রাম জেলায়) কোভিড ১৯ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এই জেলায় প্রতিদিন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। যার ফলশ্রুতিতে কোভিড ডেডিকেটেড সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহে রোগী সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছে না।
তাই কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকল্পে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরের বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহকেও বিশেষায়িত হাসপাতালে রূপান্তর করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। সেই লক্ষ্যে জনস্বার্থে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ধারা ৫ (১) (ক) ও (গ) মোতাবেক চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী এলাকায় ‘ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল’ এবং পাহাড়তলী এলাকার ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি) এর অধীনে পরিচালিত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালকে (বিবিএমএইচ) বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করে রোগী ভর্তির প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রধান করা হলো।
মঙ্গলবার দুপুরে চিঠি দুটি পাওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নেমে পড়েন বিভাগীয় স্বাস্থ্যপরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। তিনি আরকটি চিঠিতে হাসপাতাল দুটিতে রোগী ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেন এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিতে আত্মনিয়োগ করেন।
এর আগে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনী কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাসহ সরকারের রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলরা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালকে দেশের এই করোনা-সঙ্কটে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ব্যর্থ হন। ইম্পেরিয়াল কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে তাদের প্রস্তাব এড়িয়ে যায়।
এর প্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল ‘শিরোনামে একুশে পত্রিকায় একটি একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন ইম্পেরিয়ালের অসহযোগিতার কথা স্বীকার করে উষ্মা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এরপর চট্টগ্রামের এই দুই কর্তাব্যক্তি একুশে পত্রিকাকে জানান, ইম্পেরিয়াল কর্তৃপক্ষ না চাইলেও হাসপাতালটি রিক্যুইজিশন করে করোনা-সঙ্কটে চট্টগ্রামবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহার করা হবে।
এরপর স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের উদ্ধৃতি দিয়ে এবং জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের বরাতে
এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি করোনা-মোকাবিলায় এই দুটি হাসপাতালকে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সস্প্রতি চিঠি দেন স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। মূলত এসবের ফল হাসপাতাল দুটিকে বিশেষায়িত হাসপাতাল সংক্রান্ত সরকারের এই ঘোষণা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর একুশে পত্রিকাকে বলেন, সরকারি ঘোষণা সংক্রান্ত চিঠি পেয়ে আমরা এক সেকেন্ড দেরি করিনি। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণে নেমে পড়েছি। হাসপাতাল দুটিতে বিদ্যমান লজিস্টিকের পাশাপাশি আমরা রোস্টার করে চিকিৎসক নিয়োগ দেবো। সব আনুষঙ্গিকতা সম্পন্ন করে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে হাসপাতাল দুটিতে রোগীভর্তি শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানান স্বাস্থ্য পরিচালক।
এই দুটি হাসপাতাল চালু হওয়ার মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামে করোনা-চিকিৎসায় সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।