সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্পের কোটি টাকার তার উদ্ধার
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার মীরেরচর নামক স্থানে পদ্মা নদীতে সাবমেরিন ক্যাবল লাইন স্থাপন প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক তার উদ্ধার করা হয়েছে। প্রকল্পের লাইন স্থাপনে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকেরা কয়েক হাজার মিটার দীর্ঘ কোটি টাকা মূল্যের এসব তার কেটে গোপনে পাচার করছিল বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
শনিবার ভোরের দিকে এলাকাবাসী দেখতে পেয়ে ধাওয়া দিলে তার চুরির কাজে নিয়োজিত লোকজন পালিয়ে যায়। পরে এসব তার আটক করেন এলাকাবাসী। পরে কাটা তারগুলো উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্টোরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, বিপুল মূল্যের সরকারি এসব তার চুরির সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। পবিসের কর্মকর্তারা চোরেদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে। ঘটনা চাপা দিতে তৎপর ছিল সারাদিন। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করেই তারগুলো পাচার করা হচ্ছিল বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ।
উল্লেখ্য সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে পদ্মা নদীর ভেতর দিয়ে লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষকে কমমূল্যে বিদ্যুৎ প্রদানের লক্ষে এ প্রকল্পে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে ব্যয় হচ্ছে ২০০ কোটি টাকার বেশি।
ঘটনাস্থল মীরের চক এলাকার পদ্মা ব্রিকসের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম অভিযোগে বলেন, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনএস করপোরেশনের লোকজন বাগারের ভেতর দিয়ে স্থাপিত ভুগর্ভস্থ লাইন থেকে মোটা তারগুলো তুলে কেটে কেটে জড়ো করছিল।
এ সময় দুলাল নামে একজন নিরাপত্তা কর্মী ও লাইনম্যান প্রথমে দেখতে পেয়ে তাদের বাধা প্রদান করেন। তবে ঠিকাদারের লোকজন তার ওপর হামলা করেন। দুলাল চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ও ইটভাটার শ্রমিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দুলালকে রক্ষা করেন। পরস্পর জানাজানির পর এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে চোরেরা কাটা তারগুলোসহ তার কাটার সরঞ্জামাদি ফেলে পালিয়ে যায়।
এদিকে খবর পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলামসহ কর্মকর্তারা শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে তার চুরির চেষ্টার বিষয়ে বিকাল পর্যন্ত পুলিশকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। তারগুলো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নয়াগোলার স্টোরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনএস করপোরেশনের কাজ তত্ত্বাবধানকারী হামিদ নামে ঠিকাদারের একজন লোক তার কাটার সময় উপস্থিত ছিলেন। তবে পরে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পবিস কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
এলাকাবাসী আরও জানান, পদ্মা নদীর দুর্গম এলাকায় সাবমেনির ক্যাবলের সাহায্যে নদীর ভেতরে ১৯ কিলোমিটার লাইন পাতা হচ্ছে। এই ১৯ কিলোমিটারে ৬ ফেজের তার থাকছে ৫৫ কিলোমিটার। নদীভাঙন হলে যাতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায় সে কারণে নদীর পূর্ব ও পশ্চিমপ্রান্তে অতিরিক্ত ১০ হাজার মিটার তার বেশি রাখা হয়েছে। মূলত অতিরিক্ত এসব তারই কেটে পাচার করছিল ঠিকাদারের লোকজন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের নিয়োজিত কিছু শ্রমিক হয়তো তারগুলো চুরি করছিল। তিনি দাবি করেন, ঠিকাদার এ কাজে জড়িত নয়। পুলিশকে কেন জানানো হয়নি- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার উদ্ধার করে স্টোরে আনা হয়েছে। এ কারণে অভিযোগ করা হয়নি। যারা চুরি করছিল তারা পালিয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারের লোক পরিচয়দানকারী মন্টু নামের এক ব্যক্তি বলেন, তার চুরি হয়নি। সব ঠিক আছে।