সম্প্রতি সন্দ্বীপে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি পুনর্বাসন সমিতির বিবৃতি

Share the post

মোঃ ফায়েল খান (সন্দ্বীপ প্রতিনিধি): সন্দ্বীপ উপজেলায় বার বার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী এবং সন্দ্বীপবাসী ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গা বসতি অবিলম্বে প্রত্যাহারে জোর দাবি জানাচ্ছে। গত ৪ ডিসেম্বর ২০ ইং সরকারি একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে সন্দ্বীপের ভাসানচরে অবৈধভাবে ভিনদেশি রোহিঙ্গা পুনর্বাসন শুরু হয়। ইতিমধ্যে সন্দ্বীপবাসী এই দিনকে কালো দিবস ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, সন্দ্বীপবাসী প্রথম (২০১৭ ইং) থেকেই সরকার ও প্রশাসনের এই অশুভ ও অপতৎপতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও পত্রপত্রিকায় এবং বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এমনকি সংসদে এই সব অপসিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জোরালো ভাষায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল এবং এখনো সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি পুনর্বাসন সমিতি সভা সমাবেশ করে সংগঠিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। উল্লেখ যে, সরকার ও প্রশাসন প্রথমে সন্দ্বীপের ন্যায়মস্তি ইউনিয়নকে ভাসানচর হিসাবে নামকরণ করে ও পরে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে ৪০ মাইল দূরবর্তী হাতিয়া উপজেলার থানাধীন ঘোষণা করে। এই পর থেকে সন্দ্বীপবাসী বিষয়টি অস্বাভাবিকভাবে দেখতে শুরু করে। তাছাড়াও এই সন্দ্বীপকে বিভিন্ন অপকর্ম ও ক্রাইম জোনের অন্তর্ভুক্ত যেন বানাতে না পারে; তা নিয়ে সচেতনমহল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে শুরু করে। মাদকসহ অন্যান্য অপরাধে যেন এই শান্তিপ্রিয় ও দেশের অর্থনীতিতে ১৫% অবদানকারী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের আবাসস্থলে শান্তি, নিরাপত্তা ও সামাজিক ক্রাইম থেকে নিরাপদ থাকতে পারে, সে বিষয়ে সন্দ্বীপবাসী সমষ্টিগতভাবে সব সময় ঐক্যবদ্ধভাবে একযোগে কাজ করছে। সন্দ্বীপে গত কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে চলেছে, তা সন্দ্বীপবাসী দীর্ঘদিন ধরে যে দুঃস্বপ্নের অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছিল; তা সত্যি হতে চলেছে।

ভিনদেশি ও বিদেশী রোহিঙ্গা (প্রাথমিক ভাবে ১ + ৩ = ৪ জন ২ বারে) অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে শংকিত ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে ও এলাকাবাসি নানা রকম দুশ্চিন্তায় পড়েছে। কেননা রোহিঙ্গা কিশোর/কিশোরী সহ হিউমান ট্রাফিকিং – মানব পাচারের কোন সঙ্গবদ্ধ এজেন্ট এই অনুপ্রবেশের সাথে জড়িত থাকতে পারে। সন্দ্বীপ একটি ভার্জিন এলাকা ও এতে কম্যুনিটি ডাইভারসিটি রয়েছে। এই প্রাচীন, ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী এই জনপদের সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি রয়েছে ঈর্ষণীয়। ইতিহাস বলছে যে, রোহিঙ্গা ও মগরা সন্দ্বীপের নারী-পুরুষ ও বালক-বালিকাদের ধরে নিয়ে গিয়ে পুর্তুগীজ জলদস্যুদের কাছে বিক্রি করতো। আরাকানি-রোহিঙ্গা ও মগরা সন্দ্বীপবাসীর উপর অহেতুক ও নির্বিচারে অত্যাচার নির্যাতন ও ধনসম্পদ লুন্ঠন করতো। সন্দ্বীপবাসি শেষ পর্যন্ত তাদের পরাজিত করতে সমর্থ হয়েছিল। সন্দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলের মগধরা (মগ+ধরা) ইউনিয়নের নামকরণ সেই গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। সন্দ্বীপের জনগণ মজ্জাগত ও জন্মগতভাবে মগ হারমাইদদের গল্প শুনে আসছে ঘুম পাড়ানি মায়ের কোল থেকে। তাছাড়াও ‘হোলা ধরোনি’ আসছে বলে বাচ্চাদের সতর্ক করা হতো সন্দ্বীপে, যেন সন্তান মায়ের আঁচল থেকে দূরে কোথাও না যায়। আর এই ভাবে সন্দ্বীপে রোহিঙ্গা-মগ বিরোধী সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। তাই এই নাজুক পরিস্থিতিকে সম্বল করে সরকার ও প্রশাসন যদি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়, তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। তাছাড়াও সম্প্রদায়গত বৈরিতার সূত্রপাত যেন না হয় ও এলাকায় শান্তি শৃংখলা বিনষ্ঠ হতে পারে এমন কোনো ঘটনা ঘটার আগে সরকারকে এগিয়ে আসতে ও ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রত্যাহার ও বাতিল করার জোর দাবি জানাচ্ছি। উপর্যুক্ত ও বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেন না যায় ও বিশ্ব দরবারে দেশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য ‘সন্দ্বীপ নদী সিকস্তি পনুর্বাসন সমিতি’র ৭ দফা প্রাণের দাবির ৭ নং দাবি অনুযায়ী সন্দ্বীপের ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গা সসম্মানে প্রত্যাহার ও তাদের বসতি স্থাপন প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করার জোর দাবি জানাচ্ছে সরকারের কাছে। এই এলাকায় শান্তি শৃংখলা ও কোনো রকম আইনের শাসনের অবনতি হবার আগে সরকারকে দায় নিতে হবে এবং অবিলম্বে ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গা বসতি প্রত্যাহার করুন। সন্দ্বীপের ন্যায়মস্তি তথা ভাসানচরকে সন্দ্বীপ উপজেলার সংশ্লিষ্ট নদী ভাঙ্গা ভূমিপুত্রদের কাছে ফিরিয়ে দিন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬৮০ কোটি টাকার প্রকল্প শুরুর আগেই, ল্যাপটপ ফটোকপি মেশিন ক্রয়ের নামে ২৫ লাখ টাকা উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগ

Share the post

Share the postমো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর পছন্দের লোক হওয়ায় ২০২৩ সালে মার্চ মাসে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পান এ.কে.এম নিলয় পাশা। গত বিশ মাসে নানা কৌশলে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অফিস চত্বরের কয়েক […]

ঝালকাঠিতে জমে উঠেছে ‘হাউন আঙ্কেলের ভাতের হোটেল’

Share the post

Share the postমো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ কোন সিনেমার গল্প কিংবা ট্রল নয়, এবার সত্যিই চালু হয়েছে হাউন আঙ্কেলের ভাতের হোটেল। ভাইরাল এই নামটি শুনেই দিন দিন বাড়ছে গ্রাহকের সংখ্যা। লাভও হচ্ছে বেশ ভালই। আর হাউন আঙ্কেলের ভাতের হোটেলটির গ্রাহকরাও খাবারের মানে দারুণ সন্তুষ্ট। বর্তমানে পলাতক থাকা সাবেক ডিবি পুলিশ প্রধান হারুণ অর-রশীদ তার […]